ওগো শুনছো!


লেখক: মুহাম্মদ আতীক উল্লাহ

বিষয়: গল্প-উপন্যাস / রচনা

3 রেটিং / 3 টি মতামত
মূল্য: Tk. 260.0  Tk. 130.0   (50.0% ছাড়)

 

বইয়ের নাম ওগো শুনছো!
লেখক মুহাম্মদ আতীক উল্লাহ
প্রকাশনী Maktabatul Azhar - مكتبة الأزهر - মাকতাবাতুল আযহার
সংস্করণ 1 2015
পৃষ্ঠা সংখ্যা 128
ভাষা

মুহাম্মদ আতীক উল্লাহ


এই বিষয়ের আরো বই

পাঠকের মতামত ও রেটিং

মো: সাব্বীর আহম্মেদ @ August 18, 2022


‘ওগো, শুনছো!’ জি না, আপনাকে উদ্দেশ্য করে এ কথা বলিনি। সুতরাং ঘাবড়ে যাওয়ার কোন কারণ নেই। মূলত এটি সুনামধন্য-জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ও লেখক শায়খ মুহাম্মাদ আতিক উল্লাহ এর একটি বইয়ের নাম। কি! নামটা শুনে আপনার ঠিক আমার মতই মাথায় একটি বিষয় আটকে গেল বুঝি? সে যাই হোক না কেন, বইটি কিসের ওপর লেখা তা আমরা বিস্তারিত জানবো ইন শা আল্লাহ। তবে প্রথমে আমি আমার অনূভুতি প্রকাশের মধ্য দিয়েই শুরু করতে চাই। ◾বইটি যখন পড়তেছিলাম, কেন জানি চোখ অন্যদিকে যেতে চাইছিল না । যদিও আমার পরীক্ষা চলছে! মনে করি, এই এক পাঠ পড়ে একটু বিরত নিব কিন্তু আরেক পাঠ যে কখন শেষ হয়ে যায়, বোঝা মুশকিল। তাঁর লেখা বইগুলোর মাঝে এটিই আমার প্রথম পড়া। ছাত্র মানুষ, টাকার সমস্যা যখন প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায় তখন শখগুলো মনেই চেপে রাখতে হয়। যাহোক, তার সাহিত্যের ঢঙ, শব্দচয়ন, বাচনভঙ্গি, হাস্যরসাত্নক বাক্যের উপস্থিতি, কখনো চক্ষু বেয়ে অশ্রু গড়ার মত বাস্তবধর্মী চিত্রের অবলোকন আমাকে করেছে মুগ্ধ। তিনি আরও মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন পাঠগুলো সাহিত্যের আবেশে মেখে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা, করণীয় ও শিক্ষা তুলে ধরার মাধ্যমে। লেখকের লেখার তরঙ্গ হৃদয়কে করেছে তরঙ্গিত। গল্পটা কখন কোন দিক মোড় নিবে তা শেষ পর্যন্ত না পড়লে বুঝে উঠাই মুশকিল মনে হয়েছে আমার কাছে। এমনও হয়েছে, তিনি পজিটিভ দিকটা'ই নেগেটিভ দিকটার মাধ্যমে প্রথমে তুলে ধরেছেন। এখানে তিনি একটা বার্তা দিয়ে গেছেন যে- “অন্যের ব্যাপারে পরিষ্কার না জেনে ভুল ধারণা করা ঠিক নয়।" পাশাপাশি কিছু আরবী শব্দের ব্যবহারও বেশ লক্ষণীয়। অন্যদিকে পাঠককে তাঁর পাঠের শেষ পর্যন্ত ধরে রাখার একটা অসাধারণ গুণ আল্লাহ তিনাকে উপহার দিয়েছেন বলে মনে করি। লেখককে নিয়ে বেশিকিছু লেখার প্রয়োজনবোধ করছি না। যারা তার বই পড়েছেন, তারা আশা করি বুঝতে পারবেন। আল্লাহ লেখককে হায়াতে বারাকাহ দান করুন ও ঈমানী মৃত্যু নসীব করুন। ◾মূল কথায় আসি। ‘মায়া, ভালোবাসা’ শব্দ দু'টির সাথে কম বেশি আমাদের পরিচয় অনেকদিনের। শব্দ দু'টি শুনতেই অনেকের মনের গহীনে হানা দেয় একদল কালো মেঘ আর দমকো হাওয়া। আর সেই দমকা হাওয়ায় দীর্ঘশ্বাস হয়ে বেড়িয়ে আসে ভেতরের কষ্টটাকে হালকা করতে। যদি এই মায়া, এই ভালোবাসা হালাল পন্থায় ব্যয় করা যায়, তাহলে এত আঁধারের ঘনঘটা স্বভাবতই আসবেনা। তাইতো উচিত সুন্দর, শরীয়তসম্মত পন্থায় এগুলো ব্যবহার করা। স্বামী-স্ত্রী যার অন্যতম উদাহরণ। আর তাদেরকে নিয়েই লেখকের এই আয়োজন। এখন আমরা পর্যায়ক্রমে পরিচিত হব, বইটি মূলত কোন বিষয়ের ওপর লেখা, বইটির ভেতরে কি কি বিষয় আলোচনা করা হয়েছে, কেন বইটি পড়া উচিত—এসব বিভিন্ন বিষয়ে। চলুন, শুরু করা যাক! ‘ওগো, শুনছো!’ বইটিতে স্থান পেয়েছে জীবন জাগার সতেরোটি গল্প। প্রথমত, বইটির নাম শুনে আপনার কাছে মনে হবে, এখানে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে যে সম্পর্ক শুধু তার ওপর আলোচনা করা হয়েছে। আপনার ধারণা যে একবারে ভুল তা না, আপনার মনে উঁকি দেওয়া বিষয়টাই ঠিক। পাঠে স্থান পাওয়া আলোচনা- বিয়ে,,পরিবার ও সংসার নিয়েই , তবে সেখানে গল্পের আবেশে ফুটে তোলা হয়েছে একজন স্বামী-স্ত্রী একে অপরের প্রতি দায়িত্ববোধ, সন্তানদের গড়ে তোলার পন্থা। আবার সুসন্তান গড়ে তোলার বিভিন্ন টিপস নিয়ে সংলাপের ঢঙেও সেগুলো ফুটিয়ে তোলা হয়েছে চমৎকারভাবে। এছাড়াও অন্যান্য বিভিন্ন বিষয়কেও চমকপ্রদভাবে অঙ্কিত করা হয়েছে। যদি লেখকের সাজানো গল্পের আলোকে বিষয়গুলোর আলোকপাত করি, তাহলে বলতে হবে— ▪️এখানে লেখক প্রথমে একজন হাফেজ-হাফেজার চরিত্র তুলে এনেছেন যেখানে তারা উভয় স্বামী-স্ত্রী। কিন্তু তাদের থাকার মত কোন জায়গা নেই অর্থাৎ মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও নেই । অনেক কষ্টের বিবরণ এখানে ফুটে তোলা হয়েছে। কিন্তু তাদের এত কষ্টের পরও যে ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি তাদের মাঝে দেখতে পাওয়া যায়, তা আজ সত্যিই বিরল। ভালবাসার উত্তম একটি সুন্দরতম নিদর্শন এখানে উপস্থাপন করা হয়েছে। আমাদের মাঝে কয়জনই বা আছে এমন কষ্ট করে জীবন অতিবাহিত করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ? ▪️এরপর যদি আমরা পরের পাঠে চোখ রাখি, সেখানে দেখতে পাব- একজন মা তার সন্তানদের জান্নাতে প্রাসাদ নির্মাণের কাজে সহায়তা করতেছেন। শুধু যে প্রাসাদ নির্মাণ তা না, সেখানে ধনভাণ্ডার কিভাবে বৃদ্ধি করা যায়, বাগান তৈরি করা যায় তাও শিখাচ্ছেন। সাথে কাকে বেশি ভালোবাসা উচিত, কেয়ামতের দিন কেমন হবে, নবীজির সুপারিশ তাদের দরকার কি না-তা একজন মা শিখাচ্ছেন। এখানে একজন আদর্শ মা'য়ের কতটুকু প্রয়োজনীয়তা রয়েছে তার গুরুত্ব লেখক তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। ▪️একইভাবে পরের পাঠগুলিতে পর্যায়ক্রমে সন্তান প্রতিপালনের প্রায় ২৫টি দিকনির্দেশনা, তায়াক্কুল আ'লাল্লাহ তথা আল্লাহর ওপর ভরসা ও দোয়ার প্রতিফলনের সুন্দর ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। একজন মুসলিমের গৃহসংবিধান কেমন হওয়া উচিত তার ২০টি ধারার বর্ণনা, সন্তানকে মাদ্রাসায়/ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করে দিয়েই কি বাবা-মায়ের দায়িত্ব শেষ, না কি তাদের আরও দায়িত্ব রয়েছে এবং সেগুলো কি কি- তার বিবরণও এখানে মেলে। আবার কেমন মেয়েকে বিয়ে করা উচিত, বিয়ের ক্ষেত্রে হানাফি মাযহাবের কুফু'র (সমতা) ব্যাপারটার গুরুত্ব, নারীরা কি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে, আর যদি পারে তাহলে তা নারীবান্ধব ও ইসলামবান্ধব হওয়া উচিত কি না, একজন বধূর স্বামীর প্রতি করণীয়সহ বিয়ে নিয়ে তাকদিরের ব্যাপারেও সুন্দর-চমৎকার ঘটনার অবতারণা করা হয়েছে ❝ওগো, শুনছো! ❞ বইটিতে। তাছাড়াও স্বামী-স্ত্রী যে একে অপরের পোশাকস্বরূপ তথা هن لباس এর ওপর প্রায় ৩০টি পয়েন্টে সুন্দরতম কথামালায় সাজিয়েছেন যা একজন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের বন্ধনকে আরও মজবুত করে তুলবে এবং বিয়ের মাঝে যে অন্যতম তিনটি বিষয় কাজ করে (সাকানা, মাওয়াদ্দাহ ও রহমাহ) তার বিবরণ উল্লেখ করেছেন। শেষ পাঠের দিকে স্বামীর প্রতি স্ত্রীর প্রকৃত ভালোবাসার দরুন অজ্ঞান হওয়ার একটি ঘটনাও বিবৃত হয়েছে এবং জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও বুড়ো -বুড়ির যে ভালোবাসা তাও সুচারুভাবে অঙ্কন করা হয়েছে। চমৎকার এ বইটির কতিপয় লাইনগুলো আমাকে বেশ টান টানিয়েছে। তার মাঝে নিম্নের একটি লাইনটিও আমার মনকে করেছে আন্দোলিত। ❝উপহার শুধু দাম দিয়ে কিনলেন হয়না, মন দিয়ে কিনতে হয়। হোক না সেটা সামান্য বেড়ালছানা! হাঁসের ছানা! দু-টাকার বুট! ❞ ▪️শেষে এসে লেখকের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে আমিও বলছি— ❝জগতের সকল দম্পতি সুখী হোক।❞ ▪️এক নজরে বই পরিচিত— বই: জীবন জাগার গল্প ১৩: ওগো শুনছো! লেখক: মুহাম্মাদ আতীক উল্লাহ 🖋️রিভিউ— মো: সাব্বীর আহম্মেদ
ইশতিয়াক শিল্প @ September 4, 2022


#মাকতাবাতুল_আযহার_রিভিউ_প্রতিযোগীতা_২০২২ পৃথিবীতে ব্যতিব্যস্ত থাকার জন্য ফাঁকফোকরের অভাব নেই। সেসব কাজে মেলে বাহবা, হয় রাষ্ট্র বা সমাজের কার্যোদ্ধার, পাওয়া যায় যশ-খ্যাতি। এতসব গুরুত্বপূর্ণ কাজের আনজাম দিতে গিয়ে আমরা ভুলে যাই আমাদের সবচাইতে কাছের, প্রতিদিনকার চেনা পাখির নীড়ের মতো পরিবারের কথা। মনে রাখবেন, যত বড় মানুষই আপনি হোন না কেন, সুকুন তথা শান্তি আপনার কেবল এই একটি জায়গাতেই মিলবে। অনেক কাজের কাজী হবার পরেও আমাদের দাম্পত্যের ভিতটা যেন বড্ড নড়বড়ে। সংসারে কেবলই একঘেয়েমি, স্থবিরতা, নিষ্প্রাণতার হাহাকার। অথচ একটা বয়সের পরে গিয়ে মানুষের ছায়াসঙ্গী, নির্ভরতার মানুষ কেবলই তার স্ত্রী (কিংবা স্বামী)। এই সম্পর্কের সুতো ছিড়বে না জান্নাতেও। তাই ছোট্ট ছোট্ট টুকরো গল্পে এই জান্নাতি সম্পর্কে প্রাণ ফিরিয়ে আনার দরদী মেহনত করেছেন শাইখ আতিক উল্লাহ হাফিযাহুল্লাহ। জীবন জাগার গল্প সিরিজের শিরোনামে মোট সতেরোটি ছোটবড় গল্প মলাটবন্দী হয়েছে “ওগো, শুনছো!" বইয়ে। ইসলামী বইপাড়ায় আমাদের মুরুব্বি থেকে শুরু করে তরুণ আলিমগণ নানাবিধ খেদমত করে গেছেন। ফিক্বহ, সীরাত, তাফসীর, আমল বিষয়ক বইয়ে ইসলামী বাংলা বইপত্র বেশ সমৃদ্ধ। একটা দীর্ঘসময় পর্যন্ত ইসলামী বই বলতে কেবল একাডেমিক এসব লেখা কিংবা বড়জোর কিছু দুয়া, আমলের বই-ই বোঝানো হতো। তবে কচি পাঠকমন সবসময় নন-ফিকশনে মন দিতে পারে না, অলস দুপুরে তার প্রয়োজন পড়ে কিছু কল্প-গল্পের। এতদিন যেন আমরা নিঃস্বই ছিলাম ফিকশনের দিক থেকে, সাহিত্য পড়তে যেতে হতো রবীন্দ্র, মানিক, শরৎচন্দ্রে। অস্বীকার করার উপায় নেই সাহিত্যের বড় একটি অংশই দখল করে আছে প্রেম। যেহেতু ওপাড়ায় নৈতিকতা কিংবা মূল্যবোধের বালাই নেই, দেদারসে পরকীয়া, হারাম প্রেম মিশ্রিত গল্প পড়তে বাধ্যই হতো পাঠকেরা। সুদূরপ্রসারী প্রভাবটা এড়ানো যাচ্ছিলো না কিছুতেই। হাতের বইটি এই খরায় শীতল বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়েছে। ইসলামী লেখকদের কলম থেকে বেশি বেশি ফিকশন আসার সুবিধাটা হলো - প্রথমত, নন-ফিকশন পড়ার ক্লান্তির দাওয়াই কিংবা নতুন কাউকে বই পড়া শেখাতে ধরিয়ে দেয়ার জন্য সেক্যুলার সাহিত্যের একটা অল্টারনেটিভ পাওয়া গেলো। দ্বিতীয়ত, আমাদের রুচি এবং মূল্যবোধের মিশেলে হালাল-হারামের সীমারেখায় পাঠকমনের তৃষ্ণা নিবারণের ব্যবস্থা হলো। গল্পগুলোর চয়নে বুদ্ধিদীপ্ত ছাপ লক্ষ্য করেছি। কোথাও হয়তো গল্পচ্ছলে লেখক বলে গেলেন পৃথিবীর বুকেই অগোচরে থাকা একটুকরো জান্নাতের কথা। নিমগ্ন পাঠককে সেই ঘোরে রেখেই পরের গল্পে তিনি দিচ্ছেন সেই জান্নাতকে পরিচর্যা করার একগুচ্ছ নাসীহাহ। জান্নাতমহল, গৃহসংবিধান, বাড়ির কাজ, আমার বিয়ে ও বিবি কিংবা দাদু নাতনিকে গল্পগুলোতে লেখক কথোপকথনের আশ্রয় নিয়ে দিয়ে গেছেন মূল্যবান উপদেশমালা। সুখী একটি ছোট্ট কুটির পাবার জন্য এরচাইতে বেশি কোনো তত্ত্বকথার প্রয়োজন আছে বলে মনে করিনা। লেখকের গল্প বলার হাত শক্ত। দুই এতিমের সংসার, আল্লাহর পরীক্ষা, হারানো প্রেম কিংবা বাসর গল্পে সেটার পরিচয় পাওয়া যায়। হাস্য-রসাত্নক লেখায় যেমন তিনি সাবলীল, ঠিক তেমনি দক্ষ হাতে লিখেছেন ট্রাজেডিক কিংবা সমসাময়িক লেখাগুলোও। আপনাদেরকে বিরক্তির শেষসীমায় না নিয়ে তো সবকয়টি নিয়ে আলোচনা করা সম্ভব নয়। তবু সংক্ষেপে দুয়েকটি নিয়ে না বললেই নয়। দুই এতিমের সংসার বইয়ের প্রথম গল্প। হতভাগ্য দুই তরুণ তরুণীর জীবনের দীর্ঘ অংশ পাড়ি দিয়ে এক হওয়ার গল্প। এক হয়েও না হতে পারার গল্প। একটু আশ্রয়ের অভাবে আপনজনের সাথে যোজন যোজন দূরত্বে বসবাস। তবু কোনো উপলক্ষ্যে পার্কে বসে টোনাটুনির একদিনের সংসারযাপন। আল্লাহর পরীক্ষা আর হারানো প্রেম গল্পদুটির উপজীব্য কাছাকাছিই। লেখক দেখাতে চেয়েছেন আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল এবং ইসলামের ওপর অটল থাকলে আল্লাহ অভাবনীয় উৎস থেকে নিয়ামত দান করেন। পরীক্ষাকে আপাতদৃষ্টিতে যন্ত্রণার মনে হলেও কোনোরকমে উতরে গেলে ফলের যে মিষ্টতা পাওয়া যায় তার কোনো তুলনা নেই। হুন্না লিবাস-বডি হিটার কিংবা বাসর গল্পদুটো হাস্য-রসাত্নক। লেখকের ভেতরে যে আড্ডা জমানোর সহজাত গুণাবলী আছে তার পূর্ণ প্রকাশ হয়েছে গল্পদুটিতে। পড়ুয়া মেয়েকে বধুয়া করো লেখাটি একটি ইংরেজি লেখার পরিমার্জিত অনুবাদ। ইংরেজি লেখাটাও পড়া হয়েছিলো। শায়খের লেখনীতে অস্বস্তিকর কিছু কথাবার্তা ঘষামাজা হয়ে একটি অনবদ্য অনুবাদ হয়েছে সেটি। একে অনুবাদ না বলে এডাপ্টেশন বলাই ভালো। খোলস একই থাকলেও লেখকের মার্জিত রুচির প্রভাবে আদ্যোপান্তই বদলে গেছে মূল লেখাটির। বধুয়া গল্পটি এক পথ হারানো তরুণের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার গল্প। বন্ধুবান্ধবী নিয়ে আবির চিম্বুক পাহাড়ে ক্যাম্পিংয়ে যায়। সেখানে তাবলীগের ভাইদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় জীবনকে ভিন্নভাবে প্রশ্ন করা শেখে। সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত এক নিয়ামত পেয়ে যায় আল্লাহর তরফ থেকে আচমকাই। পা হড়কাতে হড়কাতে খাদের কিনারায় চলে যাওয়া যুবক নিমেষেই খুঁজে পায় আল্লাহর রাহমাহ। এটা পড়ার সময় আবিরের সৌভাগ্যকে কিছুটা ঈর্ষা করেছি বটে! সবমিলিয়ে বইটিকে নির্দিষ্ট কোনো জনরায় ফেলা যাচ্ছে না। সমসাময়িক দাম্পত্যের গল্প যেমন এসেছে তেমনি এসেছে আমাদের পূর্বপুরুষের সরল গ্রামীণ সংসারের প্রতিচ্ছবি। এসেছে সন্তানের তারবিয়ত, ঘরকে জান্নাতের টুকরো বানানোর উপদেশমালা। সবশেষে আবার মানস-গঠন অধ্যায়ে লেখক দেখিয়েছেন বুদ্ধিদীপ্ত উপায়ে হাতে-কলমে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে কীভাবে সন্তানদের হাদিসের শিক্ষা দেয়া যায়। সংসার শুরু করতে যাচ্ছেন, কিছুটা সংশয় কিছুটা ভয় আর অনিশ্চয়তা কাজ করছে কিংবা একঘেয়ে সংসারজীবনে হাঁপিয়ে উঠেছেন -- এমন যে কারো জন্য বইটি হতে পারে অব্যর্থ প্রেসক্রিপশন। পরিবার আমাদের প্রথম দুর্গ। মডার্নিটি, ফেমিনিজম, ইন্ডিভিজুয়ালিজমের যুগে পরিবার হলো ফার্স্ট লাইন অফ ডিফেন্স। এতে ফাটল সহ্য করা যাবে না কিছুতেই। সবাইকে জীবন জাগার গল্পে স্বাগতম! এক নজরে বইটি, বই : জীবন জাগার গল্প ১৩ঃ ওগো শুনছো লেখক : মুহাম্মাদ আতীক উল্লাহ প্রকাশনী : মাকতাবাতুল আযহার বিষয় : ইসলামী সাহিত্য প্রচ্ছদমূল্য : ২৪০ টাকা রিভিউ লেখক : ইশতিয়াক শিল্প
মুহাম্মদ রুবেল মিয়া @ September 9, 2022


বইয়ের নাম : ওগো শুনছো লেখক : মুহাম্মাদ আতীক উল্লাহ প্রকাশনায় : মাকতাবাতুল আযহার পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১২৮ মুদ্রিত মূল্য : ২৪০ টাকা রিভিউ লেখক : মুহাম্মদ রুবেল মিয়া শায়খ আতীক উল্লাহ হাফি. এর বই যতো পড়ি ততই আশ্চর্যান্বিত হই। একজন আলিমের লেখায় আল্লাহ তাআ'লা এতো ইলম, এতো আবেগ, এতো সাহিত্যিক ছন্দ দিয়েছেন যে বলে বোঝানো যাবে না। শায়খের জীবন জাগার গল্প সিরিজটি পড়লে জীবন জাগবেই ইনশাআল্লাহ। শায়খের সাহিত্যিক হাতে লিখিত এই সিরিজটির ত্রয়োদশ বই "ওগো শুনছো"। নাম দেখেই বুঝতে পারছেন এটি রোমান্টিক বই। কিন্তু শুধুই কি রোমান্টিক? না ভাই, এতে আছে অশ্লীলতা বহির্ভূত রোমান্টিকতা, আছে সৎসঙ্গী নির্বাচনের উপায়, আছে বিয়ের আগের এবং বিয়ের পরবর্তী সুখময় জীবন লাভের টিপস, আছে সন্তানকে আদর্শ সন্তান হিসেবে গড়ে তোলার পদ্ধতি। আর সুখময়, আবেগময়, রোমান্টিক, ভালো লাগার মতো গল্পতো অবশ্যই আছে! বিয়ের আগের প্রস্তুতি এবং উত্তম জীবনসঙ্গী নির্বাচনের জন্য পড়তে চান? তাহলে পড়ুন "আমার বিয়ে ও বিবি", " বধূয়া" এবং "পড়ুয়া মেয়েটিকে বিয়ে করুন" গল্প তিনটি। বিয়ের সময়কার বিষয় নিয়ে পড়তে চান? তাহলে পড়ুন "বাসর" গল্পটি। বিয়ে পরবর্তী সুখময় জীবন নিয়ে পড়তে চান? তাহলে পড়ুন "দাদু নাতনিকে", "হুন্না লিবাস-বডি হিটার" এবং "সাকানা-মাওয়াদ্দাহ-রহমাহ" গল্পগুলো। সন্তান লালন-পালন সম্পর্কে পড়তে চান? তাহলে পড়ুন "জান্নাত মহল", "গৃহ সংবিধান" এবং "বাড়ির কাজ" গল্প তিনটি। যদি বলেন, না, আমি শুধুই গল্প পড়বো স্বামী-স্ত্রীর মোহাব্বত বিষয়ে। তাহলে আপনার জন্যতো আছেই "দুই এতিমের সংসার", " হারানো প্রেম" আর "খাইরুল মাতা গুনাইবিবি" নামক হৃদয় ছোঁয়া গল্পগুলো। মোট ১৭ টি গল্পে সাজানো "ওগো শুনছো" পাঠককে দিবে কিছু শিক্ষা, কিছু আনন্দ, কিছু আবেগ, কিছু ব্যাথা! পাবেন সাহিত্যের পূর্ণাঙ্গ স্বাদ, ইসলামের মাধুর্যতার একটি দিক। পাবেন গল্প পড়ার আনন্দ ও দাম্পত্য জীবন সম্পর্কিত একগুচ্ছ শিক্ষা। ইসলাম রোমান্টিকতা বহির্ভূত কোনো ধর্ম নয়। বরং ইসলামেও রয়েছে রোমান্টিকতার বাহার কিন্তু তা অবশ্যই হালালভাবে। আর হালাল রোমান্টিক জীবনটা কেমন হতে পারে তা জানার জন্যই পড়তে হবে লেখকের "ওগো শুনছো" বইটি এবং এরই পাশাপাশি "আই লাভ ইউ" ও "দুজন দুজনার" বই দুটিও। বর্তমান পাশ্চাত্য সভ্যতা যেখানে মুসলিমদের সুখময় পারিবারিক জীবনকে ধ্বংস করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে, সেখানে শাইখ আতীক উল্লাহ হাফি. কাজ করে যাচ্ছেন মুসলিম পরিবারগুলোকে রক্ষার জন্য। আল্লাহ শাইখের কলমে বারাকাহ দান করুন, আমিন।

আপনার মতামত ও রেটিং