ইসলামে দাস-দাসী ব্যবস্থা


লেখক: ডা. শামসুল আরেফীন

বিষয়: ইসলাম

11 রেটিং / 11 টি মতামত
মূল্য: Tk. 480.0  Tk. 240.0   (50.0% ছাড়)

 

বইয়ের নাম ইসলামে দাস-দাসী ব্যবস্থা
লেখক ডা. শামসুল আরেফীন
প্রকাশনী Maktabatul Azhar - مكتبة الأزهر - মাকতাবাতুল আযহার
সংস্করণ 1 2022
পৃষ্ঠা সংখ্যা 264
ভাষা
পাঠকপ্রিয় শক্তিমান লেখকের কোমল তুলির আঁচড়ে দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে, দাসপ্রথার মর্মস্পর্শী নানাদিক। শানিত যুক্তির ধারালো বাণে উড়ে গেছে ইসলামবিরোধীদের মান্ধাতা আমলের যতসব ঠুনকো অসার অপযুক্তি। ইসলামের প্রতিটি বিধান সুন্দর মানবিক। স্বাগতম ইসলামের সৌন্দর্যের অপরূপ ভূবনে।

ডা. শামসুল আরেফীন


এই বিষয়ের আরো বই

পাঠকের মতামত ও রেটিং

আমাতুল্লাহ সুমাইয়া রহমান @ August 20, 2022


দাস-দাসী বা গোলাম-বাঁদী এই শব্দগুলোর সঙ্গে আমরা প্রায় প্রত্যেকেই পরিচিত। পৃথিবীতে প্রায় ১৮টা সভ্যতার কথা জানা যায়। প্রায় সকল সভ্যতায় এবং পরবর্তী সময়ের সকল ধর্ম ও দেশে দাস-দাসীর উপস্থিতি খুব জোরালোভাবে লক্ষ করা যায়। আমরা যারা ইসলাম চর্চা করি, দাস-দাসী শব্দদুটির সঙ্গে আমাদের পরিচিতি তুলনামূলক বেশি। যখন থেকে সীরাত পড়তে শিখেছি, তখন থেকে দেখেছি যে, রাসূল সা. এর দুধমাতা সুওয়াইবিয়া রা. আবু লাহাবের দাসী ছিলেন। রাসূলের একমাত্র পালক ছেলে যায়দ, যার নাম পবিত্র কুরআনে এসেছে, তিনিও এক সময় দাস ছিলেন। রায়হানা ও মারিয়া নামে রাসূলের দুজন বাঁদী ছিলো। ইসলামি ইতিহাস অধ্যয়ন করলে আরও দেখা যায় যে, একাধিক খলিফা দাস ছিলেন। দাস-দাসীর ইতিহাসে অসংখ্য মুহাদ্দীস ও ফকীহ-এর নাম উল্লেখ পাওয়া যায়। অনুরূপ কুরআনেরও বিভিন্ন স্থানে দাস-দাসীর আলোচনা পরিলক্ষিত হয়। এমনকি হাদীস ও ফিকহের গ্রন্থসমূহে দাস-দাসীর বিধি-বিধান সম্বলিত স্বতন্ত্র অধ্যায় রয়েছে। সুতরাং এই শব্দদুটি আমাদের কারও নিকট মোটেও অপরিচিত নয়। তবে ভীষণ আশ্চর্যের বিষয় হলো, দাস-দাসী শব্দদুটি আমাদের কাছে যতটাই পরিচিত ঠিক ততটাই এর প্রকৃত বাস্তবতা আমাদের কাছে অস্পষ্ট। যখন কোনো বইয়ে শব্দদুটি দেখি তখন মনের ভেতর হাজার রকম প্রশ্ন উঁকি দেয়। দাসদের সূচনা-ইতিহাস, বিভিন্ন সভ্যতা, ধর্ম ও দেশে এর বাস্তবতা ও বিধান কী ছিলো? কখনো মনে হয়েছে, অন্তত ইসলাম ধর্মে এর অনুমোদন কেন হলো। মনে হতো ইসলাম ধর্ম যদি হয় পূর্ণিমার চাঁদ, তাহলে দাসপ্রথা হলো সেই চাঁদের গায়ের কলঙ্ক। সীরাতুল মুস্তাকীমের মসৃণ পথে মাত্র একটিই বাঁক, আর তা হলো দাসপ্রথা। সর্বোপরি এর সঙ্গে যখন যুক্ত হয় ইসলামবিদ্বেষীদের বিদ্বেষমূলক বিভিন্ন মিথ্যা সংবাদ, অপব্যাখ্যা ও প্রোপাগান্ডা তখন সত্যিই বিভ্রান্তিতে পড়ে যাই। তবে যখন কারও কাছ থেকে শুনি ইসলামে একসময় দাসপ্রথা বিলুপ্ত ও রহিত করা হয়েছে তখন সান্ত্বনা পেলেও আরও একটি বড় প্রশ্ন দেখা দেয়- এমন প্রতিষ্ঠিত একটি বিষয় যে রহিত হয়ে গেছে এর প্রমাণ কি? ঠিক এমন সময় লেখক ডা. শামসুল আরেফীন-এর ‘ইসলামে দাস-দাসী ব্যবস্থা’ বইটি হাতে আসে। লেখক পেশায় একজন চিকিৎসক হলেও লেখালেখির জগতে অল্প কিছুদিনেই ভালো সুনাম কুড়িয়েছেন। লেখনীর মাধ্যমে দাওয়াতী কাজে তিনি নিজেকে গভীরভাবে নিয়োজিত রেখেছেন। কারো মতে তার লেখার একটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো, ইসলামিক বিষয়গুলো শক্ত ও মজবুত দলীল-প্রমাণের আলোকে উপস্থাপন করা, এবং পরাজিত মানসিকতায় প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান গ্রহণের পরিবর্তে ইউরোপীয় দর্শনকে প্রশ্নবাণে আক্রমণ করা। তিনি ২০১৭ সালে ‘ডাবল স্ট্যান্ডার্ড’ নামে একটি বই লিখেন। এর দ্বিতীয় অধ্যায়টি ছিলো দাসপ্রথা সম্পর্কে। তবে এতে আলোচনা খুবই সংক্ষিপ্ত ছিলো। এর পর দীর্ঘ চার বছর ধারাবাহিকভাবে এ বিষয়ে গবেষণা করেন এবং দাসপ্রথার উপর যুগান্তকারী বই ‘ইসলামে দাস-দাসী ব্যবস্থা’ রচনা করেন। দাসপ্রথা সংক্রান্ত বাংলাভাষায় রচিত এটিই প্রথম বই। মূল বিষয়বস্তুর সঙ্গে প্রাসঙ্গিক সকল বিষয় এতে স্থান পেয়েছে। প্রতিটি বিষয় উপস্থাপন করা হয়েছে অত্যন্ত তথ্যসমৃদ্ধ ও রেফারেন্স সহকারে। দাসপ্রথার সূচনা-ইতিহাস যেহেতু সুনিশ্চিতভাবে জানা যায় না, তাই লেখক এ বিষয়ে আলোচনা দীর্ঘ না করে বিভিন্ন সভ্যতা, দেশ, ধর্ম ও সমাজে বিভিন্ন যুগে দাসপ্রথার ব্যবস্থা, অবস্থান ও প্রকৃতি কেমন ছিলো সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। এরপর ইসলামে কেন দাসপ্রথার অনুমোদন করা হয়েছে এর তথ্যসমৃদ্ধ ও যৌক্তিক আলোচনা করেছেন। বই পড়ার এক পর্যায়ে পাঠক জানতে পারবেন যে, পৃথিবীর বুকে মোট পাঁচটি কারণে একজন স্বাধীন মানুষ দাসে পরিণত হতো। আর এর মধ্যে কেবল একটি পদ্ধতিকেই ইসলাম অনুমোদন করেছে। তবে ইসলাম এটি অবশ্যই একটি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রেখেছে। ইসলামে কেবল যুদ্ধনীতির একটি অংশ হিসেবে যেহেতু দাসপ্রথা অনুমোদিত, তাই লেখক এর প্রাসঙ্গিক সকল বিষয়কে বিভিন্ন খণ্ড খণ্ড শিরোনামে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। ইসলামে দাসপ্রথার মূল লক্ষ্যই হলো অমুসলিম দাসদের ইসলামের কাছাকাছি নিয়ে আসা এবং তাদের ইসলাম বুঝার ও কাছ থেকে দেখার বা পর্যালোচনা করার একটি কার্যকর ক্ষেত্র তৈরি করে দেয়া। আরও সহজভাবে বলা যায়, ইসলামে দাসপ্রথার বৈধতার প্রধান উদ্দেশ্য হলো দাওয়াত-প্রদান, এই বইয়ে তা স্পষ্ট ও বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই অংশটুকু পড়ে আমি যারপরনাই খুশি হয়েছি। মনে হয়েছে, আমার হাজার প্রশ্নের উত্তর শুধু এর মধ্যেই খুঁজে পেয়েছি। এরপর বইয়ে ধারাবাহিকভাবে প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। যেমন, জেনেভা কনভেনশন ১৯২৯ ও জেনেভা কনভেনশন ১৯৪৯, যুদ্ধকালীন মনস্তত্ব, দাসপ্রথার অপকার, দাসমুক্তি, মানবাধিকার ও আধুনিক দাসপ্রথা, যুদ্ধে নারীর নিয়তি ও দাসীদের সাথে সহবাসের বৈধতা ইত্যাদি। আর সবশেষে তিনটি পরিশিষ্টে বইয়ের আলোচ্য বিষয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রশ্ন বা অস্পষ্টতা দূর করা হয়েছে। বইয়ের সম্পাদকীয়-ভূমিকায় বইটির অনন্য বৈশিষ্ট্য হিসেবে নিম্নোক্ত তিনটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে- ১. বইটিতে পরাজিত মানসিকতায় প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান গ্রহণের পরিবর্তে ইউরোপীয় দর্শনকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করা হয়েছে। ২. পুঁজিবাদী বিশ্বের হর্তাকর্তাদের চাপিয়ে দেয়া আধুনিক দাসপ্রথার নির্মমতার বাস্তব চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। ৩. মূল বিষয়বস্তুর সাথে কোনোভাবে প্রাসঙ্গিক, এমন বিষয়গুলোর অত্যন্ত তথ্যপূর্ণ আলোচনা এসেছে। বইটি পড়া শেষে সম্মানিত পাঠক উপরোক্ত বিষয়গুলোর বাস্তবতা অবশ্যই দেখতে পাবেন। আরও বুঝতে পারবেন, নির্দিষ্ট বিষয়ে এটি একটি অনন্য ও অসাধারণ বই। দাসপ্রথার সকল দিক ও বিষয়ের সাথে পাঠকের একটি সামগ্রিক সংযোগ ঘটিয়ে দেওয়ার সফল চেষ্টা আছে এ বইয়ে। পশ্চিমাদের বস্তাপচা জ্ঞানে যারা প্রভাবিত, তাদের অপপ্রচার ও অপসংস্কৃতি দেখে যারা মুগ্ধ, তারা পূর্ববর্তীদের বিভিন্ন বর্ণনা, উক্তি ও ব্যাখ্যাকে বিকৃতিসাধন করে ইউরোপের ব্যাখ্যা গ্রহণ করে বলে যে, ইসলাম দাসপ্রথাকে রহিত করে দিয়েছে, এই বইয়ে তাদের প্রোপাগান্ডারও সমুচিত জবাব পাওয়া যাবে। আর বইটির বড় সৌন্দর্য হলো, লেখক প্রত্যেক বিষয়ের আলোচনায় তথ্য পেশ করার ক্ষেত্রে মূল গ্রন্থসমূহ থেকে অসংখ্য রেফারেন্স উল্লেখ করেছেন। পরিশেষে বলতে চাই, আরবি, উর্দু ও বাংলাসহ বিভিন্ন ভাষায় রচিত এ বিষয়ের বিভিন্ন বই রয়েছে। কিন্তু বাংলা ভাষায় ইতোপূর্বে স্বতন্ত্রভাবে এ বিষয়ে কোনো বই রচিত হয়নি। ভাষার সাবলীলতায় ও তথ্যসমৃদ্ধিতে এটি অবশ্যই শ্রেষ্ঠত্বের দাবি রাখে। সবচেয়ে বড় কথা, বিষয়াদির বর্ণনায় অবশ্যই পাঠক এতে ভারসাম্য দেখতে পাবেন। আমরা আশাবাদী, লেখকের অন্যান্য বইয়ের মতো এটিও গ্রহণযোগ্যতার শীর্ষে থাকবে। রিভিউঃ আমাতুল্লাহ সুমাইয়া রহমান তারিখঃ ২০/০৮/২০২২ ইং
জুনায়েদ রাইসী @ August 21, 2022


#মাকতাবাতুল_আযহার_রিভিউ_প্রতিযোগিতা_২০২২ 🟢 বুক রিভিউ 🟢 বই: ইসলামে দাস-দাসী ব্যবস্থা লেখক: শামসুল আরেফীন প্রকাশনী: মাকতাবাতুল আযহার মুদ্রিত মূল্য: ৪৮০ টাকা পৃস্টা সংখ্যা: ২৬৪ 💠 প্রারম্ভিকঃ লেখক ডাঃ শামসুল আরেফীন এর প্রথম বই "ডবল স্ট্যান্ডার্ড" 2017 সালে প্রকাশিত হওয়ার পর ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। এরই ধারাবাহিকতায় 2018 সালে প্রকাশিত হয় তাঁর দ্বিতীয় বই "কষ্টিপাথর"। এছাড়া 2020 সালে প্রকাশিত হয় "ডাবল স্ট্যান্ডার্ড 2.0"। বিশ্বাসের কথাগুলোকে শব্দে রুপ দিতে তার কোনো জুড়ি নেই।ইসলামিক বই লিখে তিনি জিতেছেন বহু পাঠকের মন। 2022 সালে প্রকাশিত হয় তাঁর " ইসলামে দাস-দাসীর ব্যবস্থা" যা ইতিমধ্যে অনেক পাঠকের হৃদয়ে স্থান লাভ করতে পেরেছে। 💠 দাস প্রথা উৎস ইসলাম বিদ্বেষী মহল থেকে ইসলামের ওপর আরোপিত বিষয়গুলোর মধ্যে থেকে সুপরিচিত অন্যতম একটি হলো দাস-দাসী সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি । অথচ পৃথিবীর সুপ্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে এই দাস-দাসী প্রথা। প্রাচীন মিশর ও ভারতীয় সভ্যতা থেকে নিয়ে মেসোপোটেমিয়া, চৈনিক, মায়া (দক্ষিণ আমেরিকা), অ্যাজটেক, হিব্রু, গ্রীক ও রোমান সভ্যতা প্রায়ই দুনিয়ার সকল সমাজে, সকল যুগে দাসপ্রথার প্রচলন চলে এসেছে। প্রচলিত ছিল দাস প্রথার বিভিন্ন উৎস । ইসলাম এসে একদিকে দশপ্রতার একাধিক উৎসকে বন্ধ করেছে। অন্যদিকে মানব সভ্যতার নির্মম বাস্তবতা যুদ্ধকেন্দ্রিক মনস্তত্ত্বের বিবেচনায় এই প্রথাকে পরিপূর্ণরূপে বিলুপ্তও করেনি। তবে এই একটি উৎস থেকে প্রাপ্ত দাসদেরকে আখিরাতের মুক্তি ও সামাজিক জীবনের সম্মানের দিক নিয়ে আসার জন্য দিয়েছেন নজিরবিহীন পদ্ধতি। 💠 দাস প্রথাকে আমরা যে ভাবে চিনি 🤔 দাসপ্রথা বলতে আমরা যা বুঝি _ ময়লা আবর্জনায় আচ্ছন্ন একমানুষ, বর্বরতা-নিপীড়ত-নির্যাতন, কাজ না করলে পিটিয়ে কাজ করানো,ভুল করতে না করতেই মারধর করা, ইসলামের দাসপ্রথা পশ্চিমা ইউরোপ আমেরিকার দাসপ্রথায় গুলিয়ে ফেলি। আফসোস যার ফলে আমরা না জেনেই ইসলামের দেওয়া একটি নেয়ামতের বিরোধিতা করি। বাংলাভাষী মানুষের কাছে দাস-দাসী প্রথার ব্যাপারে লেখক ডা: শামসুল আরেফীন "ইসলামের দাস-দাসী ব্যবস্থা" নামক বই নিয়ে এসেছেন। কারো মনে যদি দাস-দাসী প্রথা নিয়ে কোন সন্দেহ সংশয় থাকে তাহলে তার জন্য এই বইটিই যথেষ্ট হবে। ইনশাআল্লাহ! 💠বইটিতে যা পাবেন পাঠক বইটি অধ্যয়নের মাধ্যমে জানতে পারবেন_ ইসলামে দাস-দাসী প্রথা এবং ইউরোপ এমেরিকার দাস-দাসী প্রথার মধ্যে রাত দিন তফাৎ ব্যবধান রয়েছে। ইসলামে দাস-দাসীর কতইনা মর্যাদা দিয়েছে বলা হয়েছে, দাস-দাসী তোমাদের ভাই বোনের মত, তোমরা যা খাবে তাদেরকে তা খাওয়াবে। এমনকি দাস দাসীকে মারলে তার জরিমানা স্বরূপ তাকে আজাদ করে দিতে হবে। অপরদিকে আমরা ইউরোপ আমেরিকার দাস-দাসী প্রথায় দেখতে পাই যে, কাজ কাম না করলে চাবুক দিয়ে পিটিয়ে কাম করায়, হাত পা কেটে দেওয়া হয়। বাইবেল বলেছে: 'যদি দাস প্রহারে না মারা যায় তবে মনিবকে কিছু বলা হবে না কারণ সে মনিবের সম্পত্তি, মনিব পেটাতেই পারে, না মরলেই হল আর চোখ-দাঁত নষ্ট না হলেই হবে'।[যাত্রাপুস্তক অধ্যায় ২১ থেকে:] আরো,,,,,,,কত কিছু,,,,,,,। আরো জানতে পারবেন ইসলাম কেন দাস-দাসী প্রথা সমর্থন করেছে ? এবং সম্পূর্ণরূপে তা বিলুপ না করে কেন বহাল রেখেছে? এছাড়াও আপনি আপনার হাজারো প্রশ্নের জবাব পেয়ে যাবেন এই বইয়ের মধ্যে। যা লেখক বিভিন্ন অধ্যায়ে বিভিন্ন শিরোনামে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ! আমি এই বইটি অধ্যায়ন করে মনের প্রশান্তি পেয়েছি। 💠বইটির মূল বিষয়: 'ইসলামের দাসপ্রথা'র ধারণা নিয়ে হলেও পাঠকের মাঝে খুঁজে পাবেন পাশ্চাত্য দর্শন, উপনিবেশবাদ, দাসপ্রথার আধুনিক ধরন ইত্যাদি নানান মাত্রিক আলোচনা, যা তাকে একটা সামগ্রিক আঙ্গিকে বিষয়টি বোঝার ও অনুভবের সুযোগ এনে দেবে ইনশাআল্লাহ। 💠বইটির বৈশিষ্ট্য: এক. বইটিতে প্রতিরক্ষামূলক হীনম্মন্য অবস্থান গ্রহণের পরিবর্তে ইউরোপীয় 'স্বাধীনতার' দর্শনকে প্রশ্নবানণে আক্রমণ করা হয়েছে। দুই. শান্তি ও মানবতার দাবিদার পুঁজিবাদী বিশ্বের হর্তাকর্তাদের চাপিয়ে দেয়া আধুনিক দাসপ্রথার নির্মমতার অথচ অগোচর চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। তিন. মূল বিষয়বস্তুর সাথে কোনোভাবে প্রাসঙ্গিক, এমন বিষয়গুলোর অত্যন্ত তথ্যপূর্ণ আলোচনা এসেছে। যেমন: কনসেন্ট বা সম্মতি, স্বাধীনতা, সমতা ইত্যাকার গালভরা ভুলের পিছনে বাস্তবতা। এমন আরো অনেক বিষয়ে আলোচনা এসেছে যা পড়ার সময় পাঠক দেখতে পাবেন। জুনায়েদ রাইসী 21/08/2022
জুনায়েদ রাইসী @ August 27, 2022


#মাকতাবাতুল_আযহার_রিভিউ_প্রতিযোগিতা_২০২২ 🟢 বুক রিভিউ 🟢 বই: ইসলামে দাস-দাসী ব্যবস্থা লেখক: শামসুল আরেফীন প্রকাশনী: মাকতাবাতুল আযহার মুদ্রিত মূল্য: ৪৮০ টাকা পৃস্টা সংখ্যা: ২৬৪ 💠 প্রারম্ভিকঃ লেখক ডাঃ শামসুল আরেফীন এর প্রথম বই "ডবল স্ট্যান্ডার্ড" 2017 সালে প্রকাশিত হওয়ার পর ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। এরই ধারাবাহিকতায় 2018 সালে প্রকাশিত হয় তাঁর দ্বিতীয় বই "কষ্টিপাথর"। এছাড়া 2020 সালে প্রকাশিত হয় "ডাবল স্ট্যান্ডার্ড 2.0"। বিশ্বাসের কথাগুলোকে শব্দে রুপ দিতে তার কোনো জুড়ি নেই।ইসলামিক বই লিখে তিনি জিতেছেন বহু পাঠকের মন। 2022 সালে প্রকাশিত হয় তাঁর " ইসলামে দাস-দাসীর ব্যবস্থা" যা ইতিমধ্যে অনেক পাঠকের হৃদয়ে স্থান লাভ করতে পেরেছে। 💠 দাসপ্রথা উৎস ইসলাম বিদ্বেষী মহল থেকে ইসলামের ওপর আরোপিত বিষয়গুলোর মধ্যে থেকে সুপরিচিত অন্যতম একটি হলো দাস-দাসী সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি । অথচ পৃথিবীর সুপ্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে এই দাস-দাসী প্রথা। প্রাচীন মিশর ও ভারতীয় সভ্যতা থেকে নিয়ে মেসোপোটেমিয়া, চৈনিক, মায়া (দক্ষিণ আমেরিকা), অ্যাজটেক, হিব্রু, গ্রীক ও রোমান সভ্যতা প্রায়ই দুনিয়ার সকল সমাজে, সকল যুগে দাসপ্রথার প্রচলন চলে এসেছে। প্রচলিত ছিল দাস প্রথার বিভিন্ন উৎস । ইসলাম এসে একদিকে দাসপ্রথার একাধিক উৎসকে বন্ধ করেছে। অন্যদিকে মানব সভ্যতার নির্মম বাস্তবতা যুদ্ধকেন্দ্রিক মনস্তত্ত্বের বিবেচনায় এই প্রথাকে পরিপূর্ণরূপে বিলুপ্তও করেনি। তবে এই একটি উৎস থেকে প্রাপ্ত দাসদেরকে আখিরাতের মুক্তি ও সামাজিক জীবনের সম্মানের দিক নিয়ে আসার জন্য দিয়েছেন নজিরবিহীন পদ্ধতি। 💠 দাস প্রথাকে আমরা যে ভাবে চিনি 🤔 দাসপ্রথা বলতে আমরা যা বুঝি _ ময়লা আবর্জনায় আচ্ছন্ন একমানুষ, বর্বরতা-নিপীড়ত-নির্যাতন, কাজ না করলে পিটিয়ে কাজ করানো,ভুল করতে না করতেই মারধর করা, ইসলামের দাসপ্রথাকে পশ্চিমা ইউরোপ আমেরিকার দাসপ্রথায় গুলিয়ে ফেলি। আফসোস যার ফলে আমরা না জেনেই ইসলামের দেওয়া একটি নেয়ামতের বিরোধিতা করি। বাংলাভাষী মানুষের কাছে দাস-দাসী প্রথার ব্যাপারে লেখক ডা: শামসুল আরেফীন "ইসলামের দাস-দাসী ব্যবস্থা" নামক বই নিয়ে এসেছেন। কারো মনে যদি দাস-দাসী প্রথা নিয়ে কোন সন্দেহ সংশয় থাকে তাহলে তার জন্য এই বইটিই যথেষ্ট হবে। ইনশাআল্লাহ! 💠বইটিতে যা পাবেন পাঠক বইটি অধ্যয়নের মাধ্যমে জানতে পারবেন_ ইসলামে দাস-দাসী প্রথা এবং ইউরোপ এমেরিকার দাস-দাসী প্রথা এক নয়, রাত দিন ব্যবধান রয়েছে। ইসলামে দাস-দাসীর কতইনা মর্যাদা দিয়েছে বলা হয়েছে, দাস-দাসী তোমাদের ভাই বোনের মত, তোমরা যা খাবে তাদেরকে তা খাওয়াবে। এমনকি দাস দাসীকে মারলে তার জরিমানা স্বরূপ তাকে আজাদ করে দিতে হবে। অপরদিকে আমরা ইউরোপ আমেরিকার দাস-দাসী প্রথায় দেখতে পাই যে, কাজ কাম না করলে চাবুক দিয়ে পিটিয়ে কাম করায়, হাত পা কেটে দেওয়া হয়। বাইবেল বলেছে: 'যদি দাস প্রহারে না মারা যায় তবে মনিবকে কিছু বলা হবে না কারণ সে মনিবের সম্পত্তি, মনিব পেটাতেই পারে, না মরলেই হল আর চোখ-দাঁত নষ্ট না হলেই হবে'।[যাত্রাপুস্তক অধ্যায় ২১ থেকে:] আরো.......কত কিছু.......। আরো জানতে পারবেন ইসলাম কেন দাস-দাসী প্রথা সমর্থন করেছে ? এবং সম্পূর্ণরূপে তা বিলুপ না করে কেন বহাল রেখেছে? জানতে পারবেন জেনেভা কনভেনশন ১৯৪৯, দাসপ্রথার অপকার, মানবাধিকার ও আধুনিক দাসপ্রথা সম্পর্কিত বিষয় গুলো। এছাড়াও আপনি আপনার হাজারো প্রশ্নের জবাব পেয়ে যাবেন এই বইয়ের মধ্যে। যা লেখক বিভিন্ন অধ্যায়ে বিভিন্ন শিরোনামে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। আপনি সবচেয়ে বেশি হতভম্ব হবেন যখন "পশ্চিমারা তো সম্পূর্ণ বিলোপ করেছে" শিরোনামে গল্পটি পড়বেন। ১৮০০ শতাব্দীর পূর্বে সর্বত্রে দাসপ্রথা বৈধ ছিলো, এমনকি ১৫০০ সাল থেকে ১৮০০ সাল পর্যন্ত এই তিশ বছর "দাসব্যবসা" ছিলো ইউরোপের অন্যতম লাভ জনক ব্যবসা। কিন্তু ১৮০০ শতাব্দীর পর কোন সার্থে "দাসব্যবসা" বন্ধ করে দেয় এবং ১৮৩৩ -এর পর পুরো "দাসপ্রথা" বিলোপ করার আইন করে ? গল্পটি পড়লেই জ্ঞাত হবেন। আলহামদুলিল্লাহ! আমি এই বইটি অধ্যায়নে আমি অনেক কিছু জেনেছি, মনের প্রশান্তি পেয়েছি।🥰 💠বইটির মূল বিষয়: 'ইসলামের দাসপ্রথা'র ধারণা নিয়ে হলেও পাঠক এর মাঝে খুঁজে পাবেন পাশ্চাত্য দর্শন, উপনিবেশবাদ, দাসপ্রথার আধুনিক ধরন ইত্যাদি নানান মাত্রিক আলোচনা, যা তাকে একটা সামগ্রিক আঙ্গিকে বিষয়টি বোঝার ও অনুভবের সুযোগ এনে দেবে ইনশাআল্লাহ। 💠বইটির বৈশিষ্ট্য: এক. বইটিতে প্রতিরক্ষামূলক হীনম্মন্য অবস্থান গ্রহণের পরিবর্তে ইউরোপীয় 'স্বাধীনতার' দর্শনকে প্রশ্নবানণে আক্রমণ করা হয়েছে। দুই. শান্তি ও মানবতার দাবিদার পুঁজিবাদী বিশ্বের হর্তাকর্তাদের চাপিয়ে দেয়া আধুনিক দাসপ্রথার নির্মমতর অথচ অগোচর চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। তিন. মূল বিষয়বস্তুর সাথে কোনোভাবে প্রাসঙ্গিক, এমন বিষয়গুলোর অত্যন্ত তথ্যপূর্ণ আলোচনা এসেছে। যেমন: কনসেন্ট বা সম্মতি, স্বাধীনতা, সমতা ইত্যাকার গালভরা ভুলের পিছনে বাস্তবতা। এমন আরো অনেক বিষয়ে আলোচনা এসেছে যা পড়ার সময় পাঠক দেখতে পাবেন। জুনায়েদ রাইসী 21/08/2022
ফাহিম হাসান @ September 8, 2022


#মাকতাবাতুল_আযহার_রিভিউ_প্রতিযোগীতা_২০২২ বই: ইসলামে দাস-দাসী ব্যবস্থা লেখক: ডা. শামসুল আরেফীন প্রকাশনী: মাকতাবাতুল আযহার পৃষ্ঠা সংখ্যা: ২৬৪ মুদ্রিত মূল্য: ৪৮০ টাকা ভূমিকা: দ্বিনের জন্য ইলম অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর অত্যাবশ্যকীয় দায়িত্ব। যেসব বিষয় নিয়ে ইসলামকে আঘাত করা হয় সে বিষয়গুলো সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখার প্রয়োজনীয়তা আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। এ ধরনের টপিকে যদি সাজানো গোছানো তথ্যবহুল একখানা বই পাওয়া যায় তাহলে তো সোনায় সোহাগা। প্রিয় লেখক শামসুল আরেফিন ভাই যেন সেই খোরাকই মিটিয়ে আসছেন। শামসুল আরেফিন ভাইয়ের লেখা বললেই প্রথমে মাথায় আসে সাবলীল সহজ সরল উপস্থাপনা, তথ্যবহুল লেখা, রেফারেন্সে ভরপুর। উক্ত বইটিও এর ব্যতিক্রম নয়। বইটি পড়া শুরু করলে যেন মনে হবে ভাইয়ের কোন তথ্যবহুল আলোচনা শুনছেন। বুড়ো গুঁড়ো সকল শ্রেণীর পাঠকের পাঠ উপযোগী একখানা বই। বিষয়বস্তু জটিলতা থাকা সত্ত্বেও বইটিকে সহজপাঠ্যই বলা চলে। মূল বিষয়বস্ত : বইয়ের নাম দেখে মূল বিষয়বস্তু সম্পর্কে সহজেই আঁচ করা যায়। কুফফার গোষ্ঠী কিংবা ওরিয়েন্টালিস্টদের নির্দিষ্ট কিছু প্রলাপ আছে যেগুলো দিয়ে তারা ঘুরেফিরে ইসলামকে আঘাত করতে চায়। তাদের অন্যতম প্রিয় হাতিয়ার হচ্ছে ইসলামের দাস-দাসী ব্যবস্থা। তারা তাদের অভিজ্ঞতা প্রসূত দাস-দাসীর কনসেপ্ট দিয়ে ইসলামকে বিচার করতে চায়। প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়,বিশ্বাসীদের মনে সংশয় সৃষ্টি করতে চায়। আমাদের মত সরলমনা মুসলিমদের মনে প্রায়ই উকি দেয় নানা ধরনের প্রশ্ন। যার উত্তর আমরা খুঁজে ফিরি ওরিয়েন্টালিস্টদের লেখা বিভিন্ন প্রবন্ধের মধ্যে। এখানেই মূল ভুলটি হয়ে বসে। সরিষার মধ্যেই ভূত থাকলে তো বিপদ। তারা এমন ভাবে উপস্থাপন করতে চায় যেন দাস প্রথা ইসলামেরই আবিষ্কার। অথচ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলে আসছে এই ব্যবস্থা। সব ধরনের তথাকথিত সভ্যতার মধ্যে এর অস্তিত্ব লক্ষণীয়। আচ্ছা মানলাম ইসলামের পূর্ব থেকে দাস দাসীর ব্যবস্থা ছিল। তাহলে ইসলাম যে দাস দাসীর ব্যবস্থাকে প্রমোট করছে সে বিষয়ে কি বলবেন? উত্তরটা খুবই সহজ। তবে বোঝার জন্য অন্তত মস্তিষ্ক থাকা দরকার। ইসলাম দাস ব্যবস্থার একাধিক উৎস কে নাজায়েজ করে দিয়েছে। শুধুমাত্র একটি উৎস কে বহাল রেখেছে। যুদ্ধ শুধু ময়দানেই হয় না, যুদ্ধের মধ্যে বড় একটি অংশ থাকে মানসিক যুদ্ধ। আর এই মানসিক যুদ্ধ বিবেচনায় রেখে ইসলাম দাস প্রথা কে পুরোপুরি বাতিল করে দেয়নি। তবে একাধিক শর্ত আরোপ করেছে। দাস প্রথা বলতে চোখে ভেসে ওঠা বর্বর চিত্রের পরিবর্তে উপস্থাপন করেছে এক অতুলনীয় দৃষ্টান্ত। যার নজীর পূর্বেও কেউ উপস্থাপন করতে পারেনি ভবিষ্যতেও পারবেনা ইনশাল্লাহ। ইসলাম দাসদের দিয়েছে নজীরবিহীন সম্মান, দিয়েছে মর্যাদা, আদায় করেছে অধিকার। দাসের প্রতি আচরণের ব্যাপারে সর্বোচ্চ তাকওয়া অবলম্বন করতে বলেছে। সকল ক্ষেত্রে তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে বলেছে। বিভিন্ন ছোট বড় বিষয় দাস মুক্তির প্রতি উৎসাহিত করেছে। কিন্তু এত কিছুর পরেও তাদের প্রশ্নের মুখে পড়ে মুসলিমরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায়, ইসলামে দাস প্রথার বিষয়টিকে এড়িয়ে যেতে চায়। অনেকে তো সরাসরি অস্বীকার করে বসে। দাস প্রথা নিয়ে কথা বলতে অস্বস্তি বোধ করে। লেখক বক্ষমান গ্রন্থের পাতায় পাতায় ফুটিয়ে তুলেছেন দাসপ্রথার যৌক্তিকতা। দেখিয়েছেন দাস প্রথার প্রয়োজনীয়তা। যুদ্ধ পরবর্তী সমস্যা সমাধানে এর থেকে উৎকৃষ্ট কোন পন্থা স্বয়ং আপত্তিকারীরাই উপস্থাপন করতে পারেনি। লেখক শুধু ইসলামের দাসপ্রথা কে ব্যাখ্যা করেছেন তা নয়, বরং যারা এই প্রথার বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলে তাদের পুরা ব্যবস্থাকেই প্রশ্নের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। তাদের বিচার বিভাগের নীতিমালাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। তাদের পূর্বের ইতিহাস তুলে এনেছেন। দাস প্রথার পক্ষে তাদের পূর্বপুরুষদের অবস্থান ফুটিয়ে তুলেছেন। তাদের চশমায় দাস প্রথাকে ব্যাখ্যা করেছেন। কেন তাদের অভিজ্ঞতা প্রসূত দাস প্রথা আর আমাদের ইসলামের দাসপ্রথা এক নয় তা অক্ষরে অক্ষরে বুঝিয়েছেন। পশ্চিমাদের প্রভুরা কিভাবে দাস প্রথা কে অনুমোদন দিয়েছেন, বিভিন্ন বই পুস্তকে দাস প্রথার উপযোগিতা তুলে ধরেছেন সেগুলো ফুটিয়ে তুলেছেন। দাসপ্রথা যে সব থেকে উপযোগী সমাধান সেটি কথায় কথায় তুলে এনেছেন। ভারী যুক্তির চাপায় তাদের তথাকথিত মানবতা পিষ্ট হয়েছে। তাদেরই যুক্তিতে তাদের ডাবল স্ট্যান্ডার্ড কে ফুটিয়ে তুলেছেন। ইসলামের দাস প্রথা নিয়ে তাদের চুলকানির অন্যতম জায়গা হল দাসীর সাথে সহবাস। বইটিতে অত্যন্ত চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে দাসীদেরকে ব্যক্তি মালিকানা রাখার প্রয়োজনীয়তা এবং উপযোগিতা। একে একে উঠে এসেছে যুদ্ধকালীন নির্মম বাস্তবতা। যুদ্ধ পরবর্তী সাইকোলজিও সহজ সাবলীল ভাষায় তুলে এনেছেন। পশ্চিমাদের অন্তঃসারশূন্য বুলির মধ্যে অন্যতম হলো সম্মতির কনসেপ্ট, সম্মতি থাকলেই আর ধর্ষণ হয় না, যে কোন বিষয়ের ক্ষতিগুলো সব নিমিষেই চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায় এক সম্মতি থাকলেই। তাদের সম্মতির আড়ালে থাকা অত্যন্ত জঘন্য ও নিকৃষ্ট এই ব্যবস্থা, যার অন্তসারশূন্যতা প্রমাণ করার জন্য বিজ্ঞ হবার প্রয়োজন নেই। সম্মতি থাকলে তাদের কাছে শিশুকাম,পশুকাম সবই জায়েজ। আর সম্মতি না থাকলে স্বামী স্ত্রীর মধ্যকার বন্ধন নাজায়েজ। লেখকের কলমের আচড়ে তাদের এই সম্মতির সংজ্ঞা যেন মুখ থুবড়ে পড়েছে। লেখক ফুটিয়ে তুলেছেন দাসীদের জবানে তাদের অভিজ্ঞতা, তাদের আকাঙ্ক্ষা, মালিকের মালিকানায় তাদের নিরাপদ বোধ করার প্রবণতা। লেখক দেখিয়েছেন ইসলামী খিলাফতে দাস-দাসী ব্যবস্থা এবং ইউরোপীয়দের জঘন্য দাস দাসী ব্যবস্থার পারস্পরিক তুলনা। অক্ষর অক্ষরে প্রমাণ করা হয়েছে কিভাবে ইসলাম যুদ্ধ পরবর্তী নাজুক পরিস্থিতি কে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে কাজে লাগানোর মাধ্যমে দুনিয়ায় নিরাপত্তা ও আখিরাতের কল্যাণের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন তথাকথিত সভ্য ব্যবস্থার ব্যবস্থাপনাকে। তাদের নির্মম আচরণকে। তাদের কথা ও কাজের মধ্যাকর নির্লজ্জ বিরোধকে। সত্যিকারের জ্ঞানান্বেষীদের চিন্তার গিট খুলে দিতে সক্ষম বইটি। সৃষ্টিকর্তা চাহেন তো অন্তর ব্যাধিগ্রস্থদের ব্যাধির কিছুটা উপশম হতে পারে বইটি। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে একজন মুসলিম হিসেবে সকল বিতর্কের যথোপযুক্ত জবাব জানার প্রয়োজনীয়তা থেকেই বইটি পড়া একান্ত কাম্য। আল্লাহ লেখকের কলমে বারাকাহ দান করুন। রিভিউ লেখক : ফাহিম হাসান। তারিখ: ২৯-০৮-২০২২
ফাহিম হাসান @ September 8, 2022


বই: ইসলামে দাস-দাসী ব্যবস্থা লেখক: ডা. শামসুল আরেফীন প্রকাশনী: মাকতাবাতুল আযহার পৃষ্ঠা সংখ্যা: ২৬৪ মুদ্রিত মূল্য: ৪৮০ টাকা ভূমিকা: দ্বিনের জন্য ইলম অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর অত্যাবশ্যকীয় দায়িত্ব। যেসব বিষয় নিয়ে ইসলামকে আঘাত করা হয় সে বিষয়গুলো সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখার প্রয়োজনীয়তা আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। এ ধরনের টপিকে যদি সাজানো গোছানো তথ্যবহুল একখানা বই পাওয়া যায় তাহলে তো সোনায় সোহাগা। প্রিয় লেখক শামসুল আরেফিন ভাই যেন সেই খোরাকই মিটিয়ে আসছেন। শামসুল আরেফিন ভাইয়ের লেখা বললেই প্রথমে মাথায় আসে সাবলীল সহজ সরল উপস্থাপনা, তথ্যবহুল লেখা, রেফারেন্সে ভরপুর। উক্ত বইটিও এর ব্যতিক্রম নয়। বইটি পড়া শুরু করলে যেন মনে হবে ভাইয়ের কোন তথ্যবহুল আলোচনা শুনছেন। বুড়ো গুঁড়ো সকল শ্রেণীর পাঠকের পাঠ উপযোগী একখানা বই। বিষয়বস্তু জটিলতা থাকা সত্ত্বেও বইটিকে সহজপাঠ্যই বলা চলে। মূল বিষয়বস্ত : বইয়ের নাম দেখে মূল বিষয়বস্তু সম্পর্কে সহজেই আঁচ করা যায়। কুফফার গোষ্ঠী কিংবা ওরিয়েন্টালিস্টদের নির্দিষ্ট কিছু প্রলাপ আছে যেগুলো দিয়ে তারা ঘুরেফিরে ইসলামকে আঘাত করতে চায়। তাদের অন্যতম প্রিয় হাতিয়ার হচ্ছে ইসলামের দাস-দাসী ব্যবস্থা। তারা তাদের অভিজ্ঞতা প্রসূত দাস-দাসীর কনসেপ্ট দিয়ে ইসলামকে বিচার করতে চায়। প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়,বিশ্বাসীদের মনে সংশয় সৃষ্টি করতে চায়। আমাদের মত সরলমনা মুসলিমদের মনে প্রায়ই উকি দেয় নানা ধরনের প্রশ্ন। যার উত্তর আমরা খুঁজে ফিরি ওরিয়েন্টালিস্টদের লেখা বিভিন্ন প্রবন্ধের মধ্যে। এখানেই মূল ভুলটি হয়ে বসে। সরিষার মধ্যেই ভূত থাকলে তো বিপদ। তারা এমন ভাবে উপস্থাপন করতে চায় যেন দাস প্রথা ইসলামেরই আবিষ্কার। অথচ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলে আসছে এই ব্যবস্থা। সব ধরনের তথাকথিত সভ্যতার মধ্যে এর অস্তিত্ব লক্ষণীয়। আচ্ছা মানলাম ইসলামের পূর্ব থেকে দাস দাসীর ব্যবস্থা ছিল। তাহলে ইসলাম যে দাস দাসীর ব্যবস্থাকে প্রমোট করছে সে বিষয়ে কি বলবেন? উত্তরটা খুবই সহজ। তবে বোঝার জন্য অন্তত মস্তিষ্ক থাকা দরকার। ইসলাম দাস ব্যবস্থার একাধিক উৎস কে নাজায়েজ করে দিয়েছে। শুধুমাত্র একটি উৎস কে বহাল রেখেছে। যুদ্ধ শুধু ময়দানেই হয় না, যুদ্ধের মধ্যে বড় একটি অংশ থাকে মানসিক যুদ্ধ। আর এই মানসিক যুদ্ধ বিবেচনায় রেখে ইসলাম দাস প্রথা কে পুরোপুরি বাতিল করে দেয়নি। তবে একাধিক শর্ত আরোপ করেছে। দাস প্রথা বলতে চোখে ভেসে ওঠা বর্বর চিত্রের পরিবর্তে উপস্থাপন করেছে এক অতুলনীয় দৃষ্টান্ত। যার নজীর পূর্বেও কেউ উপস্থাপন করতে পারেনি ভবিষ্যতেও পারবেনা ইনশাল্লাহ। ইসলাম দাসদের দিয়েছে নজীরবিহীন সম্মান, দিয়েছে মর্যাদা, আদায় করেছে অধিকার। দাসের প্রতি আচরণের ব্যাপারে সর্বোচ্চ তাকওয়া অবলম্বন করতে বলেছে। সকল ক্ষেত্রে তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে বলেছে। বিভিন্ন ছোট বড় বিষয় দাস মুক্তির প্রতি উৎসাহিত করেছে। কিন্তু এত কিছুর পরেও তাদের প্রশ্নের মুখে পড়ে মুসলিমরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায়, ইসলামে দাস প্রথার বিষয়টিকে এড়িয়ে যেতে চায়। অনেকে তো সরাসরি অস্বীকার করে বসে। দাস প্রথা নিয়ে কথা বলতে অস্বস্তি বোধ করে। লেখক বক্ষমান গ্রন্থের পাতায় পাতায় ফুটিয়ে তুলেছেন দাসপ্রথার যৌক্তিকতা। দেখিয়েছেন দাস প্রথার প্রয়োজনীয়তা। যুদ্ধ পরবর্তী সমস্যা সমাধানে এর থেকে উৎকৃষ্ট কোন পন্থা স্বয়ং আপত্তিকারীরাই উপস্থাপন করতে পারেনি। লেখক শুধু ইসলামের দাসপ্রথা কে ব্যাখ্যা করেছেন তা নয়, বরং যারা এই প্রথার বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলে তাদের পুরা ব্যবস্থাকেই প্রশ্নের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। তাদের বিচার বিভাগের নীতিমালাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। তাদের পূর্বের ইতিহাস তুলে এনেছেন। দাস প্রথার পক্ষে তাদের পূর্বপুরুষদের অবস্থান ফুটিয়ে তুলেছেন। তাদের চশমায় দাস প্রথাকে ব্যাখ্যা করেছেন। কেন তাদের অভিজ্ঞতা প্রসূত দাস প্রথা আর আমাদের ইসলামের দাসপ্রথা এক নয় তা অক্ষরে অক্ষরে বুঝিয়েছেন। পশ্চিমাদের প্রভুরা কিভাবে দাস প্রথা কে অনুমোদন দিয়েছেন, বিভিন্ন বই পুস্তকে দাস প্রথার উপযোগিতা তুলে ধরেছেন সেগুলো ফুটিয়ে তুলেছেন। দাসপ্রথা যে সব থেকে উপযোগী সমাধান সেটি কথায় কথায় তুলে এনেছেন। ভারী যুক্তির চাপায় তাদের তথাকথিত মানবতা পিষ্ট হয়েছে। তাদেরই যুক্তিতে তাদের ডাবল স্ট্যান্ডার্ড কে ফুটিয়ে তুলেছেন। ইসলামের দাস প্রথা নিয়ে তাদের চুলকানির অন্যতম জায়গা হল দাসীর সাথে সহবাস। বইটিতে অত্যন্ত চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে দাসীদেরকে ব্যক্তি মালিকানা রাখার প্রয়োজনীয়তা এবং উপযোগিতা। একে একে উঠে এসেছে যুদ্ধকালীন নির্মম বাস্তবতা। যুদ্ধ পরবর্তী সাইকোলজিও সহজ সাবলীল ভাষায় তুলে এনেছেন। পশ্চিমাদের অন্তঃসারশূন্য বুলির মধ্যে অন্যতম হলো সম্মতির কনসেপ্ট, সম্মতি থাকলেই আর ধর্ষণ হয় না, যে কোন বিষয়ের ক্ষতিগুলো সব নিমিষেই চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায় এক সম্মতি থাকলেই। তাদের সম্মতির আড়ালে থাকা অত্যন্ত জঘন্য ও নিকৃষ্ট এই ব্যবস্থা, যার অন্তসারশূন্যতা প্রমাণ করার জন্য বিজ্ঞ হবার প্রয়োজন নেই। সম্মতি থাকলে তাদের কাছে শিশুকাম,পশুকাম সবই জায়েজ। আর সম্মতি না থাকলে স্বামী স্ত্রীর মধ্যকার বন্ধন নাজায়েজ। লেখকের কলমের আচড়ে তাদের এই সম্মতির সংজ্ঞা যেন মুখ থুবড়ে পড়েছে। লেখক ফুটিয়ে তুলেছেন দাসীদের জবানে তাদের অভিজ্ঞতা, তাদের আকাঙ্ক্ষা, মালিকের মালিকানায় তাদের নিরাপদ বোধ করার প্রবণতা। লেখক দেখিয়েছেন ইসলামী খিলাফতে দাস-দাসী ব্যবস্থা এবং ইউরোপীয়দের জঘন্য দাস দাসী ব্যবস্থার পারস্পরিক তুলনা। অক্ষর অক্ষরে প্রমাণ করা হয়েছে কিভাবে ইসলাম যুদ্ধ পরবর্তী নাজুক পরিস্থিতি কে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে কাজে লাগানোর মাধ্যমে দুনিয়ায় নিরাপত্তা ও আখিরাতের কল্যাণের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন তথাকথিত সভ্য ব্যবস্থার ব্যবস্থাপনাকে। তাদের নির্মম আচরণকে। তাদের কথা ও কাজের মধ্যাকর নির্লজ্জ বিরোধকে। সত্যিকারের জ্ঞানান্বেষীদের চিন্তার গিট খুলে দিতে সক্ষম বইটি। সৃষ্টিকর্তা চাহেন তো অন্তর ব্যাধিগ্রস্থদের ব্যাধির কিছুটা উপশম হতে পারে বইটি। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে একজন মুসলিম হিসেবে সকল বিতর্কের যথোপযুক্ত জবাব জানার প্রয়োজনীয়তা থেকেই বইটি পড়া একান্ত কাম্য। আল্লাহ লেখকের কলমে বারাকাহ দান করুন। রিভিউ লেখক : ফাহিম হাসান।
তামিম ইব্রাহিম @ September 9, 2022


বইঃ ইসলামে দাস-দাসী ব্যবস্থাঃ যুদ্ধ-মনস্তত্ত্ব, জেনেভা কনভেনশন ও বাস্তবতা লেখকঃ ড. শামসুল আরেফীন বইয়ের বিষয়বস্তু ও এটি রচনার উদ্দেশ্য ইসলামবিদ্বেষী মহল থেকে ইসলামের নানান বিষয় নিয়ে সমালোচনা করার মাধ্যমে ইসলামকে খাটো করে দেখানোর অপচেষ্টা করা হয়। ইসলামের যেসব বিষয়গুলো নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা-সমালোচনা হয় সেসবের মধ্যে নিঃসন্দেহে ইসলামী দাসপ্রথা অন্যতম। দাসপ্রথা নিয়ে ইসলামবিদ্বেষীদের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে অনেক মুসলিমই ইরতিদাদের দিকে যায়। আবার অনেকেই ইসলাম নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগেন। তারা ভাবেন, "মানবজাতির মুক্তির ধর্ম ইসলাম কীভাবে এই বর্বর প্রথাকে বহাল রাখতে পারলো?" এই হীনমন্যতা থেকে মুক্তি পেতে তারা apologetic পন্থা অবলম্বন করেন, অনেক সময়ে হয়তো কুফরের সাথেও নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন। বিভিন্ন যুক্তিপ্রমাণ এনে তারা এটা প্রমাণের চেষ্টা করেন যে ইসলাম প্রকৃতপক্ষে দাসপ্রথাকে অবলুপ্ত করতে চেয়েছে। তবে দাসপ্রথার সাথে অর্থনৈতিক বিষয়াদি জড়িত থাকার কারণে ইসলাম হঠাৎ করেই পুরোপুরিভাবে দাসপ্রথাকে অবলুপ্ত করে দেয়নি, বরং তা ধাপে ধাপে অবলুপ্ত করতে চেয়েছে। কিন্তু আসলেই কি বিষয়টা সেরকম? নাহ। মোটেও না। লেখক মূলত unapologetic পন্থা অবলম্বন করে ও প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন আলাপ টেনে এনে এই বিষয়টাকেই পাঠকের সামনে তুলে ধরতে চেয়েছেন যে দাসপ্রথা ইসলামের অংশ এবং শরীয়ত দাসপ্রথাকে পুরোপুরি অবলুপ্ত করতে চায়নি কখনোই। সেই সাথে শরীয়ত কেন এমনটা করলো এবং ইসলামী দাসপ্রথা কীভাবে এই বর্তমান আধুনিক যুগে এসেও প্রাসঙ্গিক তার সুবিস্তারিত ব্যাখ্যা তিনি প্রদান করার চেষ্টা করেছেন। আর আমার মতে, লেখকের এই প্রচেষ্টা আল্লাহর রহমতে পুরোপুরি সার্থক হয়েছে। দাসপ্রথা ও এর সাথে জড়িত প্রত্যেকটি প্রাসঙ্গিক টপিক তার লেখনির মাধ্যমে সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে, একটিও বাদ যায়নি। বইয়ের মধ্যে কোন কোন টপিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে সেটা তুলে ধরলেও রিভিউয়ের কলেবর অনেক বড় হয়ে যাবে! লেখকের চিত্ত-মনোভাব ও বৈশিষ্ট্য লেখক একজন দৃঢ়চিত্তের unapologetic মুসলিম এবং বিশিষ্ট চিন্তাবিদ ও গবেষক। ইসলামবিদ্বেষীদের বিভিন্ন অভিযোগের প্রত্যুত্তরে ইসলামী চিন্তাবিদদের সাধারণত ডিফেন্সিভ পজিশন গ্রহণ করতে দেখা যায়। কিন্তু বইয়ের লেখক এর ব্যতিক্রমদের অন্যতম। তিনি অফেন্সিভ পন্থা অবলম্বন করেন। ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি ও এর মহত্ম তুলে ধরার সাথে সাথে পাশ্চাত্য দৃষ্টিভঙ্গি ও তার ফাটলসমূহ তুলে ধরার মাধ্যমে পাশ্চাত্য দর্শনের শিকড়ে তিনি প্রবল আঘাত হানেন এবং যথাযথভাবে তা খণ্ডন করেন। এই কাজ সম্পাদন করতে তিনি ভুড়ি ভুড়ি রেফারেন্স ও উদ্ধৃতি ব্যবহার করেন, যা তার লেখার মান ও নির্ভরযোগ্যতাকে বহুগুণে বৃদ্ধি করে। লেখকের এই বৈশিষ্ট্যসমূহ লেখককে দাসপ্রথার মতো অস্বস্তিকর ও স্পর্শকাতর টপিকে ইসলামের পক্ষে হয়ে লেখার যোগ্যতা প্রদান করেছে। বইয়ের বাচনভঙ্গি পুরো বইয়ে লেখকের বর্ণনাভঙ্গি ও শব্দচয়ন ছিলো একেবারেই সাদামাটা। মধ্যে মধ্যে তিনি আমাদের কথিত ভাষার অতি পরিচিত বুলি ব্যবহার করে নিজ লেখনিকে পাঠকের সামনে আরও প্রাণময় ও রসালো আকারে উপস্থাপন করেছেন। তাই সবাই-ই বইটা স্বাচ্ছন্দ্যে পাঠ করতে পারবে ইন শা আল্লাহ। বইয়ের যে অংশ আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে বইটার সবচেয়ে পছন্দের অংশ হচ্ছে 'যুদ্ধকালীন মনস্তত্ত্ব (War Psychology)' এবং 'দাসপ্রথার অপকার' শিরোনামের আলোচনাগুলো। 'যুদ্ধকালীন মনস্তত্ত্ব (War Psychology)' শিরোনামের অধ্যায়ে দুটি গুরুত্বপূর্ণ এক্সপেরিমেন্টের ব্যাপারে আলোচনা করে সেগুলোর ফলাফলের সাথে যুদ্ধকালে পরাজয়ী ও বিজয়ী সৈন্যদের মনস্তাত্ত্বিক অবস্থার যোগসূত্র স্থাপন করা হয়েছে। অন্যদিকে, 'দাসপ্রথার অপকার' শিরোনামে আলোচ্য বিষয় ছিল দাসপ্রথার প্রকৃত স্বরূপ উদঘাটন, 'দাসপ্রথা (Slavery)' পরিভাষাটির সংজ্ঞায়নে ইতিহাসবিদদের নানান মত উপস্থাপন, দাসপ্রথাকে কোনো নির্দিষ্ট মাত্রার পরাধীনতা হিসেবে না দেখে একে একটা বর্ণালী (spectrum) এর সাথে তুলনা করা। এসব নিয়ে আলোচনার পর পরিশেষে, বইয়ের এই অধ্যায়ে দাসপ্রথার বিভিন্ন খারাপ দিক তুলে ধরা হয়েছে এবং দেখানো হয়েছে যে কীভাবে ইসলাম শরীয়াহ আইনের বেড়াজালে দাসপ্রথার খারাপ দিকগুলো প্রশমণ/হ্রাস/বিলুপ্ত করে ও ভালো দিকগুলো ব্যবহার করে দাসপ্রথাকে মানবজাতির কল্যাণে কাজে লাগিয়েছে। বইটির অনন্যতা ও গুরুত্ব আমার কাছে মনে হয় যে ইসলামবিরোধী ও পথভ্রষ্টদের দৌরাত্ম্যের এই যুগে এই বইটার গুরুত্ব খুবই বেশি। কেননা, শুধুমাত্র দাসপ্রথার ব্যাপারে ইসলামের পূর্ণাঙ্গ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এক মলাটে আবদ্ধ ও সহজ বাংলায় লেখা দ্বিতীয় কোনো বই নাই। এই বইয়ে দাসপ্রথার সাথে প্রাসঙ্গিক আলোচনাগুলোও বেশ ইন্টারেস্টিং। প্রচুর পরিমাণে রেফারেন্স ও উদ্ধৃতি দেওয়ার কারণে বইটার গুণগত মান ও নির্ভরযোগ্যতা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সাথে বর্তমান যুগের সাথে প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন কনসেপ্টের (যেমনঃ কনসেন্ট, ব্যক্তিস্বাধীনতা ইত্যাদি) ব্যাপারে লেখকের স্বচ্ছ ধারণা থাকায় লেখক সার্থকভাবে ঐসব কনসেপ্টের গঠনমূলক সমালোচনা করেছেন এবং কেন ঐসব কনসেপ্ট শেষ পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ে খাটে না সেটা তুলে ধরেছেন; যা বইটাকে পাঠকের কাছে যুগোপযোগী করে তুলেছে। সম্মানিত মুসলিম ভাই-বোনদের প্রতি আরজ প্রত্যেক মুসলিমেরই উচিত আল্লাহর বান্দা হিসেবে তাঁর প্রেরিত বিধানগুলো সম্পর্কে পর্যাপ্ত পরিমাণে জ্ঞান রাখা। দাসপ্রথা এমন একটি বিধান যা ইসলাম রহিত করে দেয়নি এবং যা শরীয়তের অংশ। সুতরাং, দ্বীনের এই বিধান সম্পর্কে প্রত্যেক মুসলিমেরই পরিষ্কার ধারণা থাকা আবশ্যক। তা না হলে বিভ্রান্তিতে পতিত হওয়ার, কুফরের সাথে জড়িয়ে যাওয়ার এবং এমনকি ইসলামবিদ্বেষীদের অপপ্রচারে প্রভাবিত হয়ে দ্বীন থেকে খারিজ হয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থেকে যাবে। এ আশঙ্কা থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য এবং দাসপ্রথা নিয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে প্রাথমিক ও স্বচ্ছ ধারণা রাখার জন্য সকলকে বইটি পড়ার আহ্বান রইলো। আল্লাহ আমাদের সকলকে সবসময় সঠিক পথ প্রদর্শন করুন। কিছু ছোটখাটো ভুল সংশোধনের জন্য প্রকাশনীর প্রতি বিনীত নিবেদন বইয়ের লেখনি নিয়ে কোনো সমালোচনা আমার নাই। তবে সেটা বাদে দুয়েকটা ছোটখাটো বিষয় ঠিক করে নিলে ইন শা আল্লাহ পাঠকগণ বইটি পড়তে আরও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে। ১। বইয়ে দেওয়া ছবিগুলোর কোয়ালিটি ভালো হওয়া দরকার। সেই সাথে সাদা-কালো ছবির বদলে রঙিন ছবি যুক্ত করলে আরও ভালো হয়। ২। বইয়ের প্রথম প্রকাশের ৫৩ নম্বর পৃষ্ঠায় ৭১ নং এবং ৫৪ নম্বর পৃষ্ঠায় ৭৫ ও ৭৭ নং রেফারেন্সের জায়গায় কোনো রেফারেন্স নেই; বরং জায়গাটা ফাঁকা। আশা করি পরবর্তী সংস্করণে উক্ত ফাঁকা জায়গায় উপযুক্ত রেফারেন্স ঠাই পাবে। রিভিউ লিখনে, তামিম ইব্রাহিম ১৫ই আগস্ট, ২০২২
মুহাম্মদ রুবেল মিয়া @ September 9, 2022


বইয়ের নাম : ইসলামে দাস-দাসী ব্যবস্থা লেখক : ডা. শামসুল আরেফীন শক্তি প্রকাশনায় : মাকতাবাতুল আযহার পৃষ্ঠা সংখ্যা : ২৬৪ মুদ্রিত মূল্য : ৪৮০ টাকা রিভিউ লেখক : মুহাম্মদ রুবেল মিয়া - ইসলাম যদি আধুনিক ধর্মই হয়ে থাকে তাহলে দাস ব্যবস্থা বহাল রাখলো কেনো! - দেখেন, ইসলাম মানুষকে দাস বানানোর পক্ষপাতী! - ইসলামতো দাস ব্যবস্থার বিলুপ্তি ঘটাতে পারেনি, তাহলে এটি মানবতাবাদী ধর্ম হলো কি করে? ইত্যাদি ইত্যাদি... এরকম হাজারো প্রশ্ন শোনা যায় পশ্চিমা এবং তাদের দোসর নামধারী মুসলমানদের মুখে। অথচ তাঁরা কখনোই ভেবে দেখে না, ভেবে দেখার চেষ্টা করে না, ভেবে দেখা উচিত সেটা অনুভবও করে না যে, ইসলাম কেনো দাস ব্যবস্থা বহাল রাখলো। ইসলাম কি অন্যান্য সভ্যতাগুলোর মতোই দাসদের সাথে আচরণ করে থাকে, নাকি ভিন্নতা এনেছে। ইসলামের দাস ব্যবস্থার স্বরূপ কি। অথচ তাঁরা যদি এ বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতো তাহলে পেয়ে যেতো ইসলামের সুমহান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের কথা। সে বিষয়গুলো নিয়েই কলমের কালিতে কথা বলেছেন পাশ্চাত্যবাদীদের 'জম'খ্যাত ডা. শামসুল আরেফীন শক্তি ভাই। তিনি ইসলামের দাস ব্যবস্থা এবং এর পূর্ব-পরের ইতিহাস ঘেঁটে প্রমাণ করেছেন ইসলামের দাস ব্যবস্থার স্বরূপ এবং পাশ্চাত্যবাদীদের মিথ্যাচার এবং মিথ্যাচারের আড়ালে তাদের কুটিল রূপ। তাঁর রচিত অসামান্য গ্রন্থ "ইসলামে দাস-দাসী ব্যবস্থা" বইয়ে। বইটিতে যা আছে : ডা. শামসুল আরেফীন শক্তি ভাই বরাবরই তাঁর আলোচনায় শক্ত দলিল-প্রমাণ নিয়ে আবির্ভূত হন। "ইসলামে দাস-দাসী ব্যবস্থা" বইটির ক্ষেত্রে তাঁর অবস্থান যেনো পূর্বের সকল কিছুকে ছাড়িয়ে গেছে। ইসলাম আগমণের পূর্বে বিভিন্ন সমাজ ও সভ্যতায় দাস ব্যবস্থা, ওই সকল সমাজে দাসদের সাথে কেমন আচরণ করা হতো, দাস বানানোর জন্য ছিলোনা কোনো আইন - থাকলেও মানতো না কেউ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে ইতিহাসের আলোকে বিস্তর আলোচনা করেছেন। আরো আলোচনা করেছেন ইসলাম আগমনের পরবর্তীকালে পাশ্চাত্যের দাস ব্যবস্থা এবং দাসদের উপর তাদের অবর্ণনীয় অত্যাচারের কথা। আরো আছে আফ্রিকা থেকে তাঁরা কিভাবে কালো মানুষদের ধরে নিয়ে ইউরোপ এবং আমেরিকার বাজারে শিকল পড়িয়ে দাস হিসেবে বিক্রি করে দিত তার ভয়ঙ্কর কাহিনী। এমনকি জেনেভা কনভেনশনের নামে দাস মুক্তির যে চুক্তি তাঁরা করেছিলো তা আদৌ তাঁরা মানে কিনা বা প্রয়োগ করে কিনা তার স্বরূপও উঠে এসেছে "ইসলামে দাস-দাসী ব্যবস্থা" বইটিতে। আর বইটির মূল আলোচনা অবশ্যই ইসলামে দাস-দাসী ব্যবস্থা বিষয়ে। ইসলাম কেনো দাস ব্যবস্থাকে পুরোপুরি বিলুপ্ত করে দেয়নি, কেনো ধরে রেখেছে, দাসদের সাথে আচরণের কি কি নিয়ম-নীতির আবির্ভাব ইসলাম ঘটিয়েছে ইত্যাদি নানা বিষয় উপস্থাপিত হয়েছে "ইসলামে দাস-দাসী ব্যবস্থা" বইটিতে। বইটি কেনো পড়বো : শুরুতেই আমরা পাশ্চাত্যবাদী এবং পাশ্চাত্যের দোসর নামধারী মুসলমানদের কিছু প্রশ্ন উল্লেখ করেছি। এ প্রকৃতির কোনো লোকের সামনে এ বিষয়ে আলোচনা তুললে আরো অনেক প্রশ্ন এবং সংশয় তাদের মুখে শুনতে পাবেন। অনেক সময় শুনেছেনও হয়তো, কোনো উত্তর দিতে পারেন নি বা পাত্তাই দেন নি। কিন্তু প্রশ্নগুলো নিশ্চয় আপনার মনে প্রশ্নের উদ্বেগ করবে যে ইসলাম কেনো এমনটি করলো। হয়তো আপনি কোনো কুল-কিনারা করতে পারবেন না। ফলে এটি আপনার ইমানেও প্রভাব ফেলতে পারে৷ এই প্রভাবটাতো দূরের কথা সংশয়ের লেশও যেনো আপনার মনে প্রবেশ না করে সেজন্য আপনাকে পড়তে হবে ডা. শামসুল আরেফীন শক্তি ভাইয়ের লিখিত অনবদ্য "ইসলামে দাস-দাসী ব্যবস্থা" বইটি। পরিশিষ্ট : বইয়ের প্রচ্ছদ ও নামটা খুবই সুন্দর হয়েছে এবং বইয়ের আলোচনার সাথে মানানসই হয়েছে। বইয়ের আলোচনা কেমন হবে তা তো বলাই বাহুল্য। পৃষ্ঠাগুলো উন্নত এবং বাঁধাইও ভালো হয়েছে। বানান ভুল চোখে পড়েছে কিছু, কিন্তু নিতান্তই কম। সব মিলিয়ে পারফেক্ট একটি বই। বইটির আলোচনার বিষয়বস্তু এবং লেখকের নাম ইতো বইটির প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করতে যথেষ্ট। সেই সাথে যদি সবকিছুর কম্বিনেশন ভালো থাকে, তাহলেতো সোনায় সোহাগা! বইটি তেমনি সোনায় সোহাগা একটি বই!
মোঃ ফারুক আল-ফয়সাল @ September 9, 2022


#মাকতাবাতুল_আযহার_রিভিউ_প্রতিযোগিতা_২০২২ রিভিউ লেখকঃ মোঃ ফারুক আল-ফয়সাল 📖 বইঃ ইসলামে দাস-দাসী ব্যবস্থা (যুদ্ধ মনস্তত্ত্ব, জেনেভা কনভেনশন ও বাস্তবতা) লেখকঃ ডা. শামসুল আরেফীন প্রথম প্রকাশঃ মার্চ ২০২২ প্রচ্ছদঃ বুশরা আফজাল পৃষ্ঠাঃ ২৬৪ মুদ্রিত মূল্যঃ ৪৮০ টাকা প্রকাশনীঃ মাকতাবাতুল আযহার ডা. শামসুল আরেফীন ভাইয়ের লেখার সাথে পরিচয় 'ডাবল স্ট্যান্ডার্ড' বই দিয়ে। বইটা এতোটাই মুগ্ধ করেছিল, যে কতো মানুষকে পড়ার জন্য সাজেস্ট করেছি, তা গুণে শেষ করা যাবে না! এই বইতেই 'দাস-দাসী' নিয়ে একটা স্বতন্ত্র বইয়ের ঘোষণা ছিল। আর আজকে আমি সেই বই 'ইসলামে দাস-দাসী ব্যবস্থা'র রিভিউ লিখছি, আলহামদুলিল্লাহ! বইটি বায়তুল মোকাররম ইসলামি বইমেলা থেকে সংগ্রহ করেছিলাম। যারা নাস্তিক বা ইসলাম বিদ্বেষী তাদের অত্যন্ত পছন্দের একটা টপিক হচ্ছে 'ইসলামে দাস-দাসী ব্যবস্থা'। যেন ইসলাম দাস-দাসী ব্যবস্থাকে বিলুপ্ত না করে মহাপাপ করে ফেলেছে! আর তাদের প্রভুপ্রতিম দেশগুলোতে যেন দাস ব্যবস্থা নিষিদ্ধ ছিল! অথচ, হেগেল-লক-হবস, প্রেসিডেন্ট জেফারসন-ওয়াশিংটনদের চোখে মাত্র ১৭০ বছর আগেও এটা নৈতিকভাবে সঠিক ছিল। তাহলে ১৭০ বছরে এমন কী হয়ে গেল যে, হাজার বছর ধরে আর্থ-সামাজিকভাবে প্রাসঙ্গিক একটা প্রতিষ্ঠান নিকৃষ্ট বলে বিবেচিত হল। আসলে "ইসলামের দাসপ্রথা কেমন" এটা মূল প্রশ্ন নয়, "ইসলামে দাসপ্রথা কেন" এটাই ইসলাম বিদ্বেষীদের মূল আপত্তি। বইটির আলোচনা শুরু হয়েছে এই প্রশ্নের জবাব দিয়েই। দাসপ্রথা একটি সুপ্রাচীন প্রতিষ্ঠান। ঠিক কবে থেকে এর উৎপত্তি, তা বলা মুশকিল। তবে প্রাচীন সকল সভ্যতায় দাসপ্রথার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। প্রাচীন মিশর ও ভারতীয় সভ্যতা থেকে নিয়ে মেসোপোটেমিয়া, চৈনিক, মায়া, অ্যাজটেক, হিব্রু, গ্রিক ও রোমান সভ্যতা হয়ে ১৮০০ সালের আগ অব্দি দুনিয়ার সকল সমাজে, সকল যুগে দাসপ্রথা চলে এসেছে। অথচ কত কিছুই তো এর মাঝে বদলেছে। তাহলে এখন পজেটিভ-নেগেটিভ কোনোটাই না ভেবে চিন্তা করার বিষয় হল, সমাজ-সভ্যতার সাথে কতখানি প্রাসঙ্গিক হলে এর আবেদন সমান তালে বজায় থেকেছে যে, পূর্ববর্তী সকল সভ্যতায়, সকল সমাজে, সকল দেশে দাসপ্রথা ছিল। কেউ-ই কোনো কালেই, কোনো সমাজেই একে বিমোচন করার চিন্তা করেনি। এমনকি ক্ল্যাসিকাল লিবারেলিজমের চোখেও ইসলামি দাসপ্রথা প্রবলেম্যাটিক ছিল না। এখানে বলে রাখা ভালো, ইসলাম কোনো মানবরচিত ধর্ম নয় যে এটা মনমতো হলো না, চেঞ্জ করে দেই; এটা মানতে কষ্ট হচ্ছে, বাদ দিয়ে দেই। এটা আল্লাহ প্রদত্ত সর্বশেষ জীবন-বিধান। এখানে বিন্দুমাত্র ভুল বা ত্রুটি-বিচ্যুতির অবকাশ নেই এবং ইসলামে যা কিছু দেয়া হয়েছে তার সবটুকুই মানবজাতির কল্যাণের জন্য। তা আমাদের বুঝে আসুক আর নাই আসুক। ইসলামি দাসপ্রথাও এর বাইরে নয়। মনে রাখতে হবে, যে সময়ে দাসদেরকে মানুষ হিসেবেই গণ্য করা হতো না, সেই সময়ে ইসলাম এসেছে দাসদের জন্য সর্বোচ্চ মানবিক হয়ে। ইসলামের যুগেও দাসপ্রথা একটা সমস্যা ছিল। সমস্যা ছিল বলেই একে মানবিক করার প্রয়োজন পড়েছে। বিদ্যমান প্রতিটি অর্গানিক প্রতিষ্ঠানে সমস্যা ছিল বলেই ইসলাম এসেছে। পরিবারকে রিডিফাইন করেছে, সমাজ-আইন- অর্থনীতি-সংস্কৃতি-রাষ্ট্র-সমরনীতিকে সংস্কার করেছে, নীতিমালা দিয়েছে। একইভাবে দাসপ্রথাকেও। আর বিপরীতে প্রচলিত প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে পশ্চিমা সভ্যতা ন্যাক্কারজনক পর্যায়ে নিয়ে গেছে। গ্রীক-রোমান সভ্যতার দাসপ্রথাকে পেরিয়ে আমেরিকার দাসপ্রথা আরো পাশবিক দৃষ্টান্তে পৌঁছে গেছে। আধুনিক যুদ্ধে বেসামরিক হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি অতীতের যেকোনো রেকর্ডকে ভেঙ্গে দিয়েছে। জাপান আত্মসমর্পণের প্রক্রিয়া নিয়ে ভাবছে, এমন খবর মার্কিনিদের কাছে থাকা সত্বেও কেবল বিশ্বশক্তি হিসেবে নিজেদের জানান দিতে দুটো শহর পারমানবিক বোমা দিয়ে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। এই পশুত্ব তো অতীতে চেঙ্গিস খানও করে দেখাতে পারেনি। গত শতাব্দীতে যে পরিমাণ যুদ্ধ ও কষ্টে মানুষ ভুগেছে, গত ১ হাজার বছরে সে পরিমাণ মানুষ একসাথে ভোগেনি। অনেক জ্ঞানপাপীরা বলে থাকে, ইসলাম তরবারির জোরে ছড়িয়েছে! তাহলে সেক্যুলার লিবারেল মডার্নিটি ধর্ম কি দিয়ে ছড়িয়েছে? ফুল না চকলেট! কলোনি গেড়ে আমাদের যে এসব ছাইপাশ শেখালে, এখনো যে বোমা ফেলে নারী অধিকার, এলজিবিটি অধিকার শেখাচ্ছো, এগুলো তাহলে কী? বইটিতে এভাবে লেখক যেমন যুক্তি দিয়ে যুক্তিখন্ডন করেছেন, তেমনি প্রচুর রেফারেন্স ব্যবহার করেও যুক্তিখন্ডন করেছেন। তার ছোট্ট একটি নমুনা- "University of Illinois এর প্রত্নতত্ত্ববিদ্যার প্রফেসর Lawrence H. Keeley তাঁর War Before Civilization বইয়ে তথ্য উপাত্তের দ্বারা দেখিয়েছেন আধুনিক যুগের আগের যুদ্ধগুলোর প্রধান নিয়ামক ছিল 'মানুষ'। যাদের যোদ্ধাসংখ্যা বেশি, তাদের জেতার সম্ভাবনা বেশি। এখন যেমন যুদ্ধের প্রধান অস্ত্র 'প্রযুক্তি', ঐ যুগে ছিল 'মানুষ'। এজন্য সেসময় গণহত্যা এবং দাসপ্রথা ছিল শত্রুজাতিকে শত্রুহীন করার কালচার। গণহত্যা ছিল শত্রুর অস্ত্র ধ্বংসের মত একটা বিষয়। গণহত্যা ও দাসপ্রথার মাঝে ইসলাম দাসপ্রথাকে বেছে নিয়েছে এবং ইফেক্টিভলি দাসপ্রথাকে 'নিজের মানুষ' বানানোর কাজে ব্যবহার করেছে। দাসদের হাতে ইসলামের আইনশাস্ত্র বিকশিত হয়েছে। এমনকি দাসরা লড়েছে ইসলামের পক্ষে আর নিজ জাতির বিরুদ্ধে! মধ্য-এশীয় মামলুক দাসদের হাতেই হেরেছে মোঙ্গলরা… স্তেপের হাতে স্তেপ পরাজিত হয়েছে। জেনেসারি কমান্ডার রাদু বে লড়েছে আপন ভাই ভ্লাদ ড্রাকুলার সাথে। নিজ জাতির সাথে যুদ্ধ করে মুসলিম বিশ্বের সীমানা বাড়িয়েছে অটোমান জেনেসারিরা। আর মামলুক শাসন ভারতবর্ষে মুসলিম শাসনকে পোক্ত করেছে।" পুরো বইটা-ই এরকম অসংখ্য রেফরেন্সে ভরপুর। দাস বললেই যেন চোখের সামনে ভেসে ওঠে কালো চামড়ার কোনো মানুষের উপর অকথ্য নির্যাতন। ইসলাম কিন্তু এই দাসপ্রথা চালু করেনি বরং একদিকে দাসপ্রথার একাধিক উৎসকে বন্ধ করেছে, অন্যদিকে মানব সভ্যতার নির্মম বাস্তবতা "যুদ্ধকেন্দ্রিক মনস্তত্ত্বের" বিবেচনায় এই প্রথাকে পরিপূর্ণরূপে বিলুপ্তও করেনি। যুদ্ধপরবর্তী বাস্তবতায় ইসলামের সিদ্ধান্তের কোনো বিকল্প আজ পর্যন্ত কোনো সভ্যতা দিতে পারেনি। এমনকি সভ্যতার গর্ব জেনেভা কনভেনশনগুলোও পারেনি পরাজিতদের উপর যুদ্ধপরবর্তীতে নেমে আসা বিপর্যয়ের সুষ্ঠু সমাধান দিতে। 💢 এবারে আসুন ইসলাম দাস-দাসীদের সাথে কেমন ব্যবহার করতে বলেছে, তা সংক্ষেপে দেখে নিইঃ রাসূল (সাঃ) বিদায় হজ্জের ভাষণে বলেন, "তোমাদের দাস-দাসীদের ব্যাপারে সাবধান থেকো, একথাটি তিনি তিনবার বলেছেন। তোমরা যা খাও, তাদেরও তা খাওয়াও; তোমরা যা পরো, তাদেরও তা পরতে দাও। যদি তারা এমন অপরাধ করে, যা তোমরা ক্ষমা করতে ইচ্ছা করো না, তবে আল্লাহর বান্দাদের বিক্রয় করে দেবে৷ তারপরও তাদেরকে কষ্ট দিবে না।" সামুরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেন, "যদি কেউ তার দাসকে হত্যা করে, আমরা তাকে হত্যা করবো। আর কেউ যদি তার দাসের নাক কেটে দেয়, আমরাও তার নাক কেটে দিবো। যে তাদেরকে খোজা করবে, আমরাও তাকে খোজা করে দেব।" আল্লাহর রাসূল (সাঃ) আরো বলেন, "তোমরা এভাবে ডেকো না যে, আমার দাস, ও আমার দাস। বরং এভাবে ডাকো, হে আমার যুবক, হে আমার যুবতী, হে আমার বালক, হে আমার বালিকা।" অর্থাৎ, আমার অধীনস্থ হলেও সে আমার দাস নয়, বরং আমি ও সে উভয়ই আল্লাহর দাস। 'আমার দাস' এই দাবি কেবল আল্লাহর অধিকার। আমার অধিকার নেই তাকে দাস দাবি করার। বরং তার সাথে আচরণের ক্ষেত্রেও আমি আল্লাহর নিয়মের অধীন। এই নিয়মতান্ত্রিক দাসপ্রথাকেই ইসলাম অনুমোদন দেয়। আরো বিস্তারিত ও পরিষ্কারভাবে জানার জন্য বইটি পাঠের বিকল্প নেই। আমার কাছে বইটিকে এই টপিকের অদ্বিতীয় একটি বই বলে মনে হয়েছে। শামসুল আরেফীন ভাই এতো এতো তথ্য-উপাত্ত জোগাড় করেছেন যে আপনার কাছে আসলেই অবিশ্বাস্য লাগবে! কি পরিমাণ স্টাডি-ই না তিনি করেছেন বইটি রচনা করার জন্য। বইটিকে পাঠকেরা নি:সন্দেহে রেফারেন্স বুক হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। বইটির অত্যন্ত চমকপ্রদ বিষয় হচ্ছে, লেখক বইতে কুরআন-হাদীসের রেফারেন্স দিয়েছেন শয়ে শয়ে আর ওয়েস্টার্ন লেখকদের বিভিন্ন রিসার্চ বা বইয়ের রেফারেন্স দিয়েছেন হাজারে হাজারে! অর্থাৎ যাদের ইসলামে দাস-দাসীদের নিয়ে চুলকানি, তাদের স্বজাতির লেখা বই দিয়েই লেখক তাদের চুলকানির মলম দিয়েছেন, মাশা-আল্লাহ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা লেখক ভাইয়ের ইলমে ও কলমে বরকত দান করুন, আমাদের জন্য আরো বেশি বেশি লেখার তৌফিক দান করুন। আমীন।
আব্দুল মতিন শুভ @ September 9, 2022


#মাকতাবাতুল_আযহার_রিভিউ_প্রতিযোগিতা_২০২২ আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ,, নাহমাদুহু ওয়ানুসাল্লি আলা রাসুলিহিল কারিম, আম্মা বা’দ 🔰🔰🔰🔰 আচ্ছা, এমন কি কখনো হয়েছে? যে বন্ধুদের আড্ডায় বা নিজের কাছেই কখনো দাস-দাসী সম্পর্কে প্রশ্ন ওঠেছে কিংবা আলোচনার মুহূর্তে এটা নিয়ে তর্ক বির্তক হয়েছে। প্রশ্ন ওঠতেই পারে, কারণ আমি একটা দীর্ঘ সময় যাবত এ সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা বিবর্জিত সময় কাটিয়ে এসেছি। সে কবেকার কথা, এ প্রথা বিলুপ্ত (!) যেহেতু, এখনকার আধুনিক সময়ে এ নিয়ে বাস্তব কোনো উদাহরণ সামনে নাই, তো এটা নিয়ে নির্দিষ্ট নিয়মনীতি জানার কোনো বাস্তবিক কোনো উপলক্ষও নাই। দাস-দাসী ব্যবস্হা প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা একটা প্রথা। সভ্যতার আনাচে কানাচে একটু ঢুঁ মারলেই দেখা যায়, প্রতিটা সমাজে এ প্রথা ছিলো। কারণ, যুগে যুগে মানুষ নিজের কাজ সহজ করতে বা কষ্ট আহসান করতে ক্রীতদাসের ওপর নির্ভরশীল ছিল। এখন, আপনি তৎকালীন সময়ের মানুষের দাস-দাসীদের সাথে আচার-আচরণ, মানবিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন, কেমন ছিলো যুগ বিভূঁইয়ে এ ব্যবস্হার স্বরূপ। এ ব্যবস্হার সফলতা-ব্যর্থতার ইতিহাসে একটু টোকা দিয়ে জেনে নিতে পারেন। 🔰🔰🔰 মানবিকতা-অমানবিকতাঃ- ঠিক এই জায়গাটায় এসেই আপনাকে দুটো সভ্যতার দর্শনকে বাছ বিচার করার মানদন্ড নিয়ে কথা বলতে হবে। ইসলাম আসার আগে এবং ইসলাম আসার পরে এ ব্যবস্হায় কি রদবদল হয়েছে। ইসলাম পূর্ব যুগে যখন মানুষ আইয়্যামে জাহেলিয়াতের যুগে দাসকে মানুষ হিসেবে ধর্তব্য হবে কিনা এ নিয়ে চলত বিতর্ক, ইসলাম এসে ঠিক এ জায়গায় কুঠারাঘাত করে দাঁড় করিয়ে দিলো একটা সুবিন্যস্ত পর্চা। আফ্রিকা ও সাম্রাজ্যবাদীদের আগ্রাসনের তান্ডবে যেকোনো ভূমি হস্তগত করে নিরীহ মানুষদেরকে ছোঁ মেরে নিয়ে আসা হতো দাস হিসেবে, চলতো নির্যাতনের স্টীম রোলার, পান থেকে চুন খসলে মনিব হয়ে যেতো খড়গহস্ত রক্তপিপাসু। দিনের পর দিন খাদ্য পানি বন্ধ করে দিয়ে, শরীরের অঙ্গহানি করে, শারীরিক মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে একটা মানুষকে জন্তু জানোয়ারের কাতারে নিয়ে আসা ছিলো ছেলেখেলার মতো। এমনটা না যে তা শুধু ইসলাম পূর্ব যুগের ঘটনা, ইসলাম পরবর্তী যুগেও যেসব ভূখন্ডে ইসলাম পৌঁছে নাই সেখানেও ছিলো এমন দূর্ব্যবহারের লম্বা তালিকা। 🔰🔰 এখন কথা হলো, ইসলাম এসে কি করেছে? যদি সোজা বাংলায় এক কথায় বলে ফেলি, তবে বলবো, ইসলাম এসে মনিবের হাত বেঁধে দিয়েছে, শিকল পরিয়েছে কিছু নিয়মের বেড়াজালে। দাঁড় করিয়েছে মানদন্ড। কিভাবে দাস-দাসী হবে? কাকে দাস-দাসী বানানো যাবে? কি কি শর্তে তাকে বিজয়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে? পরবর্তীতে তাঁর সাথে কিভাবে আচার আচরণ করা হবে? তাকে কি খেতে দেওয়া হবে, কি পরাতে হবে, কাকে কি কাজ দেওয়া যাবে? ইত্যাদি সকল কিছুর একটা মানদন্ড তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এর ভিতরে থাকলে তুমি ইনসাফ করলে আর এর বাইরে গেলে তুমি অপরাধী হিসেবে গণ্য হলে। ইসলাম যেহেতু স্রষ্টা প্রদত্ত একটা ফিতরাতি দ্বীন, এর বিধিমালাও ফিতরাতি। এবং এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক। দাস-দাসীকে মুক্ত করে দেওয়ার মধ্যেও দিয়ে দেওয়া হয়েছে কল্যাণের দ্বার। ইসলাম এসে ইতিহাসের ধূসর খাতায় ফুঁ দিয়ে ওড়িয়ে দিয়েছে জমে থাকা ধূলোবালি। অমানবিকতার নিষ্পেষণে আটকে থাকা একটা ব্যবস্হাকে ভারসাম্যতা দিয়ে যুগসই করে তুলে দেওয়া হয়েছে মানুষের হাতে। 🔰 এ বইয়ে লেখক মহোদয়, খুব সুন্দর ও সাবলীলভাবে বর্ণনা করেছেন পুরো ব্যবস্হার চিত্রটাকে। সামনে এনেছেন আধুনিক দাসত্ব শৃঙ্খলে আবদ্ধ এক অন্ধকার দিককে, প্রশ্ন তুলেছেন মানবতার ধ্বজাধারী, সভ্যতার কথিত সাদা চামড়ার ইউরোপীয় মনিবদের মিষ্টি মধুর কথার ফুলঝুরি দিয়ে পাশ কাটিয়ে যেয়ে নতুন এক দাস ব্যবস্হার দুয়ার নিয়ে। ইসলামে দাস-দাসী ব্যবস্হার মানদণ্ড কিরূপ হবে, এর নীতিমালা কি, এ বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের দলিল কি, আহলুস সুন্নাহর ইজমা কি, এ প্রথা মানসুখ হয়েছে কি না বা হলেও এর দলিল কি এ বিষয়ে বিস্তর আলোচনা করা হয়েছে একদম সোজাসাপটা বাংলায়। পাঠক মাত্রই মুগ্ধ হবেন, ডুব দিতে পারবেন অজানা এক সমুদ্রে, বহু বছর ধরে না খোলা জং ধরা এক দ্বার খুলে যাবে আপনার চোখের সামনে। ইতিহাসের সাথে তাল মিলিয়ে বর্তমানের প্রাসঙ্গিকতায় খুব সহজেই মিলিয়ে নিতে পারবেন অজানা এই ব্যবস্হাকে। সাথে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় কথিত সভ্যদের (!) রঙিন মুখোশের পিছনে দেখে নিতে পারবেন তাদের কুৎসিত চেহারা। মানবতার মুখোশ খসিয়ে আবিষ্কার করতে পারবেন বীভৎস ও ভয়ংকার সভ্য (!) মনিবসমাজকে,,,,, আর আলোচনা না বাড়িয়ে এখানেই শেষ করছি, অবশ্যপাঠ সমতুল্য এই বই পড়ার আহ্বান জানিয়ে এবং দোয়ার মুহুর্তে এই অধম গুনাহগারকে মনে রাখার দরখাস্ত করে বিদায় নিলাম। دَعۡوٰىهُمۡ فِیۡهَا سُبۡحٰنَکَ اللّٰهُمَّ وَ تَحِیَّتُهُمۡ فِیۡهَا سَلٰمٌ ۚ وَ اٰخِرُ دَعۡوٰىهُمۡ اَنِ الۡحَمۡدُ لِلّٰهِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ - আব্দুল মতিন শুভ -ইসলামে দাস-দাসী ব্যবস্হা যুদ্ধ মনস্তত্ব, জেনেভা কনভেনশন ও বাস্তবতা -ডা. শামসুল আরেফীন শক্তি
ফয়সাল আদিব @ September 10, 2022


#মাকতাবাতুল_আযহার_রিভিউ_প্রতিযোগিতা_২০২২ ইসলামের বিরুদ্ধে সবচাইতে বেশি অভিযোগ তোলা হয়েছে দাশপ্রথার বিষয়ে।ইসলামবিরুধীরা যখন অল্প জানা কোন মুসলিমের সামনে দাসপ্রথা নিয়ে আপত্তি তুলে,ইসলামকে অমানবিক ধর্ম হিসেবে ট্যাগ লাগিয়ে দেয় তখন তারা হিনমন্যতায় ভুগে।জবাব দেয়ার বদলে পালিয়ে বাঁচতে চায়,এড়িয়ে যেতে চায়; অথচ দাসপ্রথা কে চিরতরে উৎখাত না করেই ইসলাম প্রমাণ করেছে ইসলাম একটি বাস্তববাদী ধর্ম। ভারতবর্ষে ইংরেজ শিক্ষাব্যবস্থার আমদানিকারক লর্ড উইলিয়াম মেকলে এক বক্তৃতায় বলেছিলেন,"এই শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে আমরা এমন একটা প্রজন্ম তৈরি করতে চাই যারা গায়ের চামড়ায় ত ভারতীয় কিন্তু মন-মগজ ও রুচিতে হবে ইংরেজ"।এই শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়নের মধ্য দিয়ে লর্ড মেলকের উদ্দেশ্য আজ বাস্তবায়িত হয়েছে।এই শিক্ষাব্যবস্থার হাওয়া যার গায়ে সামান্য লেগেছে সেও যখন দেখে পাশ্চাত্ত্যের কেউ ইসলাম নিয়ে এটা ওটা বলছে,এটা ওটা নিয়ে আপত্তি তুলছে তখন তার মনেও প্রশ্ন জেগে উঠে সত্যিই ত এটা এমন কেন হল?কেন ইসলাম অমন বিধান না দিয়ে এমন বিধান দিতে পারল না?কেন ইসলামে এটাকে বাদ দেয়া হয়নি? এককথায়, পাশ্চাত্যের মন-মগজ ও রুচি দিয়েই সে ইসলামকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিবে।কারণ তার মন-মগজে পাশ্চাত্যই কেবল অ্যাবসোলুট স্টান্ডার্ড।সে পাশ্চাত্য কে প্রশ্ন করতে জানে না,পাশ্চাত্যের অন্যায়কে অন্যায় বলে চিন্হিত করতে জানে না,পাশ্চাত্যের দ্বিমুখীতায় আঙ্গুল তুলতে জানে না।এদিক থেকে লেখক অবশ্য ব্যতিক্রমী একজন মানুষ।ইংরেজ প্রণিত শিক্ষাব্যবস্থার মধ্য দিয়ে শৈশব-কৈশোর শেষ করে বর্তমানে তিনি ডাক্তার হয়েছেন ঠিকই কিন্তু নিজের শিখড় ভুলে যাননি।আর দশজনের মত পাশ্চাত্যের প্রোপাগান্ডায় নিজেকে ভাসিয়ে দেননি।বরং স্রোতের বিপরীতে গিয়ে আছড়ে পড়েছেন পাশ্চাত্যের আঙ্গিনায়,পাশ্চাত্যকে দাঁড় করিয়েছেন বিচারের কাঠগড়ায়,অভিযোগের রক্ষণাত্মক জবাব দেয়ার চেয়ে আক্রমণাত্মক জবাবে ভাঙতে চেয়েছেন প্রোপাগান্ডার দেয়াল। দেশে দেশে মানবতার ফেরী করে বেড়ানো পশ্চিমাদের বাহিরের চাকচিক্য আমাদের যতই আকৃষ্ট করুক ভেতরটা তাদের মাকাল ফলের মত।পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকে যত যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে সেগুলো সব একত্র করলেও ইতিহাস এত কলঙ্কিত হবে না যতটা কলঙ্কিত করেছে পশ্চিমারা একাই।শারীরিক দাসত্বে ব্যক্তির চিন্তার স্বাধীনতা থাকে কিন্তু মানসিক দাসদের সেই স্বাধীনতাও নেই।কলোনিয়াল প্রজেক্টের মাধ্যমে পশ্চিমারা বিশ্বব্যাপী তৈরি করেছে মানসিক দাসদের এক বিশাল প্রজন্ম।এই দাসদের কাছে নিজ দেশের চেয়েও বেশি আপন পশ্চিমা সংস্কৃতি।সাদা চামড়ার প্রভুদের গীত গাইতে এরা বেশি সাচ্ছন্দ্যবোধ করে; কারণ সাদা চামড়ার প্রভু খুশি হলে কলোনিয়াল দাসদের ওপর নেমে আসে ডলার বৃষ্টি। এত ত গেলে হাজার মাইল দূরে থেকে কেবল বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিহত করার পশ্চিমাদের নোংরামির ফিরিস্তি।আর শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে হাজারো নিরহ নারী-শিশুকে হত্যা করা,বাড়িঘর ধ্বংস করা,কাঁটাতারের সীমানাকে দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক বলে নিজেরাই কাঁটাতারের বাধা পেরিয়ে যখনতখন এদেশ সেদেশে হামলা চালিয়ে যাওয়া,জেলে বন্দীদের নূন্যতম মানবাধিকার নিশ্চিত করতে না পারা? ঝপশ্চিমারাই আজ শান্তির প্রতীক বহন করে আছে,তারাই আজ মানবতার মহান শিক্ষক।লেখক বইটিতে পশ্চিমা সমাজের সাদা চামড়ার আড়ালে লোকিয়ে রাখা কালো মুখোশকে টেনে হিঁছড়ে বের করে এনেছেন। বইটি পড়লে দাসপ্রথা সম্পর্কে পশ্চিমা আপত্তিতে আর কখনও হিনমন্যতায় ভুগা লাগবে না,পশ্চিমা মদদপুষ্ট বঙ্গীয় নাস্তিকরা যখন আপনার দিকে একটি আঙ্গুল তাক করবে তখন আপনি দেখিয়ে দিতে পারবেন কিভাবে বাকি চারটি আঙ্গুল তারা নিজেরাই তাদের নিজেদের দিকে তাক করিয়ে রেখেছে।তারা ইসলামের বিরুদ্ধে কোন বিষয়ে আপত্তি তুললে এর জবাব না দিয়ে আপনি উলটো তাদেরকেই এই সমস্যা সমাধানের দায়ভার চাপিয়ে দিতে পারবেন অতপর তাদের দেয়া সমাধান কতটা অসাড় ও অবাস্তব এবং কেন ইসলামের সমাধানই সর্বোত্তম যুক্তিযুক্ত এবং যুগপোযোগী তা ব্যাখ্যা করতে পারবেন।বাংলা ভাষায় এযাবৎ কাল দাশপ্রথার আপত্তির জবাবে যত বই রচিত হয়েছে তার র্র্যাংকিং করলে এই বইটি একেবারে প্রথম সারির প্রথম নাম্বারে স্হান পাওয়ার উপযুক্ত বলা চলে। বইঃ ইসলামে দাস-দাসী ব্যবস্হা লেখকঃ ডা. শামসুল আরেফিন শক্তি বিষয়ঃ ইসলামি বিধিবিধান ও মাসআলা-মাসায়েল মু্দ্রিত মূল্যঃ ৪৮০৳ প্রকাশনীঃ মাকতাবাতুল আযহার রিভিউঃ ফয়সাল আদিব
Islam Tamim @ September 11, 2022


#মাকতাবাতুল_আযহার_রিভিউ_প্রতিযোগীতা_২০২২ বই: ইসলামে দাস-দাসী ব্যবস্থা লেখক: ডা. শামসুল আরেফিন রিভিউ লেখক: Islam Tamim ঘটনা বিশ্লেষণ করার একটা দৃষ্টিভঙ্গি সকলেরই আছে। ইংরেজিতে বলে worldview। বলতে গেলে জার্মান Weltanschauung এর পাই টু পাই ইংরেজি অনুবাদ হচ্ছে Worldview। Welt অর্থ World আর anschauung অর্থ perception। এটা একটা চশমার মতো। লাল চশমা পড়ে থাকলে সবকিছু লাল দেখাবে। যে সবুজ চশমা পড়ে আছে তাকে বোঝানো খুব কঠিন যে আরেকজন কীভাবে একই জিনিস সবুজ না দেখে লাল দেখছে। ইসলামের অনেক রুলিং নিয়ে আপত্তি তোলার মূল কারণ ইসলামকে ইসলামের চোখে না দেখে অন্য মাপকাঠিতে বোঝার চেষ্টা করা। ইসলামের যে বিষয় নিয়ে সেক্যুলার ও নাস্তিক পাড়ায় সবচেয়ে বেশি আপত্তি সেটা হচ্ছে দাসপ্রথা। সত্যি বলতে দাসপ্রথা নিয়ে আমার নিজেরও কোন সন্দেহ কাজ করতো না এমন নয়। সেই সন্দেহ দূরীকরণ ও আরও বিস্তারিত জানার লক্ষ্যেই ডা. শামসুল আরেফিন শক্তির ‘ইসলামে দাস-দাসী ব্যবস্থা- যুদ্ধ মনস্তত্ত্ব ও বাস্তবতা’ বইটি তুলে নেওয়া। শামসুল আরেফিন শক্তি এ যুগের অন্যতম শক্তিশালী লেখক। যেহেতু তিনি আমার প্রিয় লেখকদের মাঝে অন্যতম তাই মূল আলোচনায় ঢোকার আগে একটু ‘ফ্যানবয়িং’ না করলেই নয়। লেখক ডা. শামসুল আরেফিন শক্তি ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক বিষয়াদির রিফিউটেশান নিয়ে আছে তার ডাবল স্ট্যান্ডার্ড সিরিজ। ইসলামরজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মনিমুক্তো নিয়ে কষ্টিপাথর সিরিজ। দুটোরই তিনটি করে বই। দৈনন্দিন অ্যানেকডোট ও ইসলামের লাইটহার্টেড বিষয়গুলো নিয়ে কুররাতু আইয়ুন সিরিজের দুটো বই। ২০১৭ সাল থেকে ডাবল স্ট্যান্ডার্ড দিয়ে শুরু হয়ে ২০২২ সাল পর্যন্ত শামসুল আরেফিন শক্তির একক বই এসেছে দশটি। প্রতিটি সিরিজের ভাবধারা, লেখনশৈলি, উপস্থাপনা আলাদা। ডাবল স্ট্যান্ডার্ডে উপস্থাপনা করেছেন গল্পের আদলে। কষ্টিপাথরে লেখনী পুরুদস্তুর প্রবন্ধে রূপ নিয়েছে, হয়ে গিয়েছে অ্যাকাডেমিক। এয়ারপোর্ট নভেলা বলে একটা জনরায় সাহিত্য রচনা হয়। এতে বইগুলোর দৈর্ঘ্য হয় ছোট যাতে স্টেশন বা এয়ারপোর্টে বসে পড়ে ফেলা যায়। কুররাতু আইয়ুন সিরিজটা সেরকম। লাইট হার্টেড, একটা ফ্লোয়ের মধ্যেই নিমিষে শেষ হয়ে যায়। ‘ইসলামে দাস-দাসী ব্যবস্থা- যুদ্ধ মনস্তত্ত্ব ও বাস্তবতা’ আজকের আলোচ্য বই ‘ইসলামে দাস-দাসী ব্যবস্থা- যুদ্ধ মনস্তত্ত্ব ও বাস্তবতা’। বইটা প্রবন্ধ স্টাইলে লেখা। অ্যাকাডেমিক ঠিক বলব না। লেখক বেশ কিছু জায়গায় উইটের প্রয়োগ করেছেন যা অ্যাকাডেমিক লেখায় দেখা যায় না। আর জেনারেল মাসের জন্যে লেখা বই অ্যাকাডেমিক ধাঁচে লিখলে সেটা হয়ে যায় কাঠখোট্টা, সবার ঠিক হজম হয় না। তাই বইটাকে সহজপাচ্য করতে আমদানী করা হয়েছে উইটি ইলিমেন্টের। দক্ষিণহস্ত মালিকানা? প্রথমেই একটা আপত্তি দিয়ে শুরু করি। ‘ইসলামে দাস-দাসী ব্যবস্থা- যুদ্ধ মনস্তত্ত্ব ও বাস্তবতা’ বইটার নাম প্রথমে হওয়ার কথা ছিল ‘দক্ষিণহস্ত মালিকানা’। কী কারণে সে সীদ্ধান্ত হতে সরে এসে প্লেইন একটা নাম দেওয়া হলো জানিনা। কিন্তু বইয়ের মার্কেটিং, রিচ আর এংগেইজমেন্টে বিশাল ফারাক করে দিয়েছে এই নাম। মানুষের অ্যাটেনশান পাওয়া আর ধরে রাখা দুটোই আজকালকার দিনে বহুত কঠিন একটা বিষয়। ‘দক্ষিণহস্ত মালিকানা’ খুবই চটকদার একটা নাম। এই নামটা বহাল রাখলে বইটার রিচ অনেকটাই বেড়ে যেত, লোকেরা আগ্রহী হতো। বেশি মানুষের হাতে বইটা পৌঁছালে দাওয়াতের কাজো আঞ্জাম হতো প্রকাশকেরও দিনশেষে বেশি লাভ গুনতে পারতো। আচ্ছা এবার আসল আলাপ শুরু করি। আগেই বলে রাখি, ২৬৪ পৃষ্ঠার এই বইয়ের প্রতিটা লাইনই গুরুত্বপূর্ণ। তথ্যে ঠাসা এই বইয়ের সব তথ্যাদির সার সংক্ষেপ এই ক্ষুদ্র রিভিউতে তুলে ধরা অসম্ভব। বই সম্পর্কে পুরো জানতে হলে তো বইটা পড়তে হবে, কিছু করার নেই। আমি ক্ষুদ্র পাঠক, কেবল আমার অনুভূতিই বিলোতে পারি। বিশ্লেষণ বইটা শুরু করা হয়েছে দাসপ্রথার ইতিহাস দিয়ে। ইউরোপ, আফ্রিকা, আমেরিকা ইত্যাদি স্থানে দাসপ্রথা কীরককম ছিল সেসব আলাপ এসেছে শুরুতে। শামসুল আরেফিন মূল আলোচনায় ঢোকার আগে প্রিমাইজ তৈরি করে নেন। তিনি যে চিন্তা করে বইয়ের মূল আলাপটা করেছেন পাঠক ও যাতে সেই চিন্তাটা জানে সেই ব্যবস্থা করে দেন। এরপর ঢুকেছেন মূল আলোচনায়। ইসলামে কেন দাসপ্রথা বিদ্যমান, দাসীদের সাথে যৌনমিলন কেন বিদ্যমান- এসব বিষয়াদি আধুনিক বিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান দিয়ে প্রমাণ করেছেন। বইয়ের খুব বড় একটা অংশ জুড়ে আছে ওয়ার সাইকোলজি বা যুদ্ধকালীন মনস্তত্ব। বিভিন্ন স্টাডি সাইট করে লেখক দেখিয়েছেন যুদ্ধকালে মানুষের চিন্তাধারা কেমন হয়। বইয়ের মূল পয়েন্টই হলো যুদ্ধকালীন মানব মনস্তত্ত্বের দিকে দৃষ্টি রেখেই আল্লাহ তা’লা ইসলামে দাসপ্রথা বহাল রেখেছেন। একভাবে এই অধ্যায়কে তাই বইয়ের মূল অংশ বলা যায়। দাসপ্রথা শুনলেই আমাদের মাথায় আমেরিকার নিগ্রো দাসদের করুণ জীবনের কথা মাথায় চলে আসে। ইসলামের দাসপ্রথা সেরকম না একদমই। তাদের জীবন অনেকটা আধুনিক ওয়ার্কার বা চাকুরিজীবীদের মতো। বইয়ে লেখক আধুনিক চাকরিব্যবস্থার ফাঁকফোকর নিয়েও কিছু আলাপ করেছেন। পশ্চিম কেন দাসপ্রথা বিলোপ করলো সেটার সাথে মিশে আছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভ্যুলেশানের সাথে। ইতিহাস, রাজনীতি আর বিজ্ঞান মিশে একাকার হয়েছে বইতে। বইতে আরেকটা কঠিন বিষয় অ্যাড্রেস করা হয়েছে। সেটা হচ্ছে দাসীদের সাথে যৌনমিলনের বৈধতা। ব্যপারটা এত সহজ না, এর মাঝে যে আরও বহু নিয়মকানুন আছে সেটা অনেকেই জানেন না। সেসব অজানা বিষয় উল্লেখ করে লেখক মনোবিজ্ঞান দিয়ে এর ক্রিটিক্যাল বিষয়টা ব্যখ্যা করেছেন। ডা. শামসুল আরেফিন কখনোই আমাকে অবাক করতে ছাড়েন না। সন্দেহগুলো এত সহজে দূরীভূত হয়ে যায় তার বইগুলো পড়লে। মাথায় একটা বাক্যাংশ বাড়ি খায় কেবল ‘It does make sense’। মেথডলজি বইটা কোন ফতওয়ার বই না। ইসলামের রুলিং কীভাবে কাজ করে সেসব আলাপ এখানে নেই। বরং বিদ্যমান ইসলামের কিছু দৃষ্টিভঙ্গির আধুনিক বিজ্ঞানের আলোকে জাস্টিফিকেশন করা হয়েছে। লেখক পারদর্শী তার ফিল্ডে। সেই ফিল্ডের জ্ঞান ব্যবহার করেই বই লিখেছেন তিনি। তার প্রতিটি পয়েন্ট তিনি এনেছেন পশ্চিমা রিসার্চ থেকে, জার্নাল থেকে, আর্টিকেল থেকে। সুন্দর করে সেগুলোর রেফারেন্সও দিয়ে দিয়েছেন। যে কেউ যেয়ে বিস্তারিত পড়তে পারে চাইলে। বিদ্যমান তথ্য থেকে তৈরি করেছেন প্রিমাইজ। আর এরপর তিনি গিয়েছেন ইনফারেন্সে। এলোমেলো তথ্যগুলো সন্নিবেশ করে রিলেট করেছেন ইসলামের সাথে। শুনে মনে হতে পারে বেশ কাঠখোট্টা বই ‘ইসলামে দাস-দাসী ব্যবস্থা- যুদ্ধ মনস্তত্ত্ব ও বাস্তবতা’। আসলে তা না। এটা নিয়ে যায় এখন আমাদের এই বইয়ের পরের বৈশিষ্ট্যে। রিডার ফ্রেন্ডলি বই শামসুল আরেফিন শক্তি বই লেখার সময় বইয়ের পাঠযোগ্যতা বিচার করে লিখেন বোধহয়। তার অন্যান্য বইয়ের মতো ‘ইসলামে দাস-দাসী ব্যবস্থা- যুদ্ধ মনস্তত্ত্ব ও বাস্তবতা’ বইয়েও তিনি জায়গায় জায়গায় প্রচলিত ভাষা ব্যবহার করে উইট ও কৌতুক পেশ করেছেন। সময় সময় এত রেফারেন্স এনরিচড বইয়ে হালকা ভাবের ভাষার পাওয়া স্বস্তিকর। এর ফলে কঠিন বইও সুন্দর পাঠযোগ্য করে তুলেছেন লেখক। ইসলামের সমালোচনার স্বর্ণযুগ বলা যায় বর্তমান সময়কে। ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গির সাথে একমত না বর্তমান লিবারেল সমাজ। তাই সুযোগ পেলে ইসলামের বিষয়াবলি নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ে না লিবারেল মানসিকতার মানুষেরা। দাসপ্রথার মতো এমন স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে সাবলীল ও সহজ ভাষায় বই লেখাটা আসলে জরুরত ছিল। এমন একটা বই যা সর্বস্তরের পাঠক ও ক্রিটিককে আকর্ষিত করতে বাধ্য। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো দাসপ্রথা নিয়ে বহু বই থাকলেও লেখক এমন সুন্দর করে গুছিয়ে লিখেছেন যেটা বাংলা ভাষায় দ্বিতীয়টি নেই। বইয়ের শুরুতে শার’ঈ সম্পাদক ঠিক এই কথাটাই বলেছেন। কিঞ্চিত অভিযোগ লেখকের দিক থেকে বলতে গেলে কোন কমতি বইতে নেই। তবে শেষের অধ্যায়টা আরেকটু বিস্তারিত হয়তো লেখা যেতো। বইয়ের ভেতরে থাকা ডায়াগ্রামগুলো পরিষ্কার বোঝা যায় না। বইয়ের কিছু টেক্সটের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিল এই ডায়াগ্রামগুলো। সেগুলো বোঝা না যাওয়ায় টেক্সটও বুঝতে সমস্যা হয়েছে কিছু স্থানে। প্রচ্ছদ, বাধাই মোটাদাগে ঠিকঠাক। নামের বিষয়টা নিয়ে আগেই বলেছি। বইয়ের ভেতর বানান ভুল দৃষ্টিতে পড়েনি। সম্পাদনার কাজ পালন হয়েছে ভালোমতোই। একনজরে বইয়ের মূল বিষয়াবলি দাসপ্রথার ইতিহাস ইসলামে দাসপ্রথা থাকার কারণ দাসপ্রথা বহাল থাকার উপযোগিতা যুদ্ধকালীন মনস্তত্ত্ব আধুনিক দাসপ্রথা এবং চাকুরিপ্রথা যুদ্ধ ও নারী দাসীদের সাথে সহবাসের বৈধতা শেষ কথা Man is born in chains, but everywhere he thinks himself free. সমাজের, পরিবারের, রাষ্ট্রের শেকলে আমরা আবদ্ধ কোন না কোনভাবে। লিবারেল স্বাধীনতার ধারণা আরেকজনের, আমার নিজের না। আরেকজনের চিন্তাধারা নিজের করে নেওয়াও পরাধীনতা, স্বকীয়তা না। ইসলামে দাসপ্রথা নিয়ে সন্দেহের উদ্রেক হয় কারণ আমরা পশ্চিমা মাপকাঠিতে সবকিছু বিচার করে অভ্যস্ত। ছোটকাল হলে পশ্চিমকেই উৎকর্ষের শিখর ভেবেছি। মিডিয়া ও সমাজ আমাদের এমনটাই বুঝিয়েছে। তাই পশ্চিমা সে মাপকাঠির বিপরীত কিছু দেখলে সেটার বিরোধী হয়ে যাই আমরা। দাসপ্রথাও সেরকমই একতা বিষয়। লাল চশমা পড়ে সবকিছু লাল দেখছি, চশমা খুলে দেখার কথাটা মাথায় নেই। আমরা বাংলাদেশ একটা কালচারাল যুদ্ধের সম্মুখীন। এই যুদ্ধে এগিয়ে থাকতে পশ্চিমা সমাজের খুটিনাটি জানা বেহাত জরুরি। ‘ইসলামে দাস-দাসী ব্যবস্থা- যুদ্ধ মনস্তত্ত্ব ও বাস্তবতা’ বইটা সেই চশমা কিছুটা হলেও নড়বড়ে করতে অবদান রাখবে। বই: ইসলামে দাস-দাসী ব্যবস্থা - যুদ্ধ মনস্তত্ত্ব, জেনেভা কনভেনশন ও বাস্তবতা লেখক: ডা. শামসুল আরেফিন প্রকাশকাল: মার্চ ২০২২ পৃষ্ঠা সংখ্যা: ২৬৪ প্রকাশনী: মাকতাবাতুল আযহার

আপনার মতামত ও রেটিং