ইশকুল অব লাভ


লেখক: মুহাম্মদ আতীক উল্লাহ

বিষয়: গল্প-উপন্যাস / রচনা

8 রেটিং / 8 টি মতামত
মূল্য: Tk. 500.0  Tk. 250.0   (50.0% ছাড়)

 

বইয়ের নাম ইশকুল অব লাভ
লেখক মুহাম্মদ আতীক উল্লাহ
প্রকাশনী Maktabatul Azhar - مكتبة الأزهر - মাকতাবাতুল আযহার
সংস্করণ 1 2019
পৃষ্ঠা সংখ্যা 256
ভাষা

মুহাম্মদ আতীক উল্লাহ


এই বিষয়ের আরো বই

পাঠকের মতামত ও রেটিং

AmaTullah @ August 20, 2022


#মাকতাবাতুল আযহার রিভিউ প্রতিযোগিতা২০২২ নামঃ ইশকুল অব লাভ লেখকঃমাওলানা মুহাম্মদ আতীক উল্লাহ পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ২৫৬ "ইশকুল অব লাভ" বইটার নাম পড়ে কী মনে হয়?কোন বিষয়ে এটি লিখিত? এই বইয়ে কী ভালোবাসার পাঠ শেখানো হবে? এমনটাই মনে হলো আবার ভাবলাম লেখক তো গল্পকার, তিনি কি  শিক্ষক এর মতো ভালোবাসার সঙ্গায়ন করতে গিয়ে তথ্য দিয়ে বই ভরপুর করে তুলবেন? নাকি উপদেশদাতার মতো উপদেশের বোঝা পাঠকের মাথায় চাপাবেন? পড়া শুরু করে বুঝলাম নাহ এতো সম্পূর্ণ ভিন্ন ধাঁচের লেখা, পড়তে পড়তে বইয়ের জগতে যেন হারিয়ে গেলাম, কোনো বিরক্তি স্পর্শ করলো না, মনে হলো আমার কোনও কাছের মানুষ বড় সুন্দর করে দিদিমা আর হাজী সাহেবের গল্প বলছেন, বলা যায় তাদের জীবনের চিত্র আমার সামনে তুলে ধরছেন আর আমি তাদের ঘটনাবহুল জীবনের অংশে পরিণত হয়েছি, তাদের দুঃখে চিন্তায় ভেঙে পড়ছি, তাদের সফলতায় উৎফুল্ল হচ্ছি, তাদের কল্যাণ কামনা করছি, যেন আমি ভুলে গেছি তাদের কাহিনী বর্তমানের  নয়। কিন্তু একটা ভুল করে ফেলেছি মুকাদ্দিমা না পড়েই  পরের পৃষ্ঠা থেকে শুরু করেছি তাই সত্য কাহিনী ভেবেই পড়ছিলাম অর্ধেক বই পড়ার পর ভীষণ ইচ্ছে জেগেছে, ইশ যদি দিদিমার সাথে আমার দেখা হতো! কেনো জানি তখনই বই খুলতে গিয়ে মুকাদ্দিমার উপর চোখ পড়লো, আর বুঝতে পারলাম এটা সত্য কাহিনী নয়, উপন্যাস। আমি কিছুতেই এটা মানতে পারছিলাম না দিদিমা আর হাজী সাহেব উপন্যাসের  দুটি  চরিত্র মাত্র। যাইহোক। বইটা যতই পড়ছিলাম মুগ্ধ -বিমোহিত হচ্ছিলাম, স্নিগ্ধ সুকোমল অনুভূতি হৃদয়কে আচ্ছন্ন করছিলো। হাজী সাহেব সম্পর্কে কী বলবো গ্রামের সহজ সরল, অল্পশিক্ষিত মানুষ অথচ কী উনার ব্যক্তিত্ব! মনে হয় কিছুই বুঝেন না অথচ উনার সততা নির্মোহ স্বভাব আর দীনের জন্য সর্বসত্তাকে বিলিয়ে দেয়ার প্রবনতা উনাকে কোন স্তরে পৌঁছে দিয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাঁর মানবতাবোধ আর সুস্থ সুন্দর  বিবেকের কাছে তো সব প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা মূল্যহীন। " দিদিমা" কত চড়াই উতরাই পেড়িয়ে দীন কবুলের সৌভাগ্য লাভ করেছেন। কত উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও হাজী সাহেবের সাথে গ্রামের সাধারণ জীবনের সাথে নিজেকে কেমন মানিয়ে নিয়েছেন, দীনের জন্য, দ্বীনি দরসগাহের জন্য নিজের শিক্ষা, বুদ্ধি, শ্রম অকাতরে ব্যয় করেছেন আন্তরিকতার সহিত বড় ভালোবেসে। আর তাদের দাম্পত্য জীবনের মধুর পবিত্র ভালোবাসার কথা কী বলবো? শুধু বলতে চাই, সখী ভালোবাসা কারে কয় যদি জানতে চাও,  এক পবিত্র বন্ধনের পবিত্র ভালোবাসার স্বাদ যদি উপলব্ধি করতে চাও  তবে ইশকুল অব লাভ বইটি পড়ে দেখতে পারো। লেখকের লিখনশৈলী, শব্দ গাঁথুনির সৌন্দর্য বর্ণনা আর নাইবা করলাম পাঠক নিজেই তা অনুধাবন করবেন, লেখার সাথে নিজের অজান্তেই অন্তরঙ্গতাবোধ করবেন। (বিঃদ্রঃআমি লেখিকা নই, আমার লিখার হাত পাকা ও নয়। জীবনে প্রথম বই রিভিউ লিখেছি।বইটা পড়ে রিভিউ না দিয়ে থাকতে পারছিলাম না। জানি ভুলের সংখ্যা অনেক হবে, ভুল - ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই।)
সাবাবা ইসলাম @ August 29, 2022


#মাকতাবাতুল_আযহার_রিভিউ_প্রতিযোগীতা_২০২২ স্কুল অফ লাভ শাব্দিক অর্থ ভালোবাসার স্কুল। চার্চের নানরা তাদের চার্চকে যীশু ঈশ্বরের ভালোবাসার স্কুল বলে থাকে। কারণ তাদের নাকি যীশুর সাথে বিয়ে হয়, ঠিক যেমনটি হিন্দুদের দেবদাসী। মু'মিনের জন্য তার নিজের ঘরই ইশকুল অব লাভ। হুম ঠিক ধরেছেন মুহাম্মদ আতিক উল্লাহ উস্তাদের লেখা " ইশকুল অব লাভ " বই নিয়ে রিভিউ দিতে চাইছি আনারি পাঠক এই আমি!!! বইয়ের নাম : ইশকুল অব লাভ লেখক : মুহাম্মদ আতিক উল্লাহ প্রকাশনায় : মাকতাবাতুল আযহার মুল্য : ৪৮০ টাকা রিভিউ লেখক : সাবাবা ইসলাম মুল চরিত্র হাজী সাহেব /মাঝি এবং নীলিমা /দিদিমা/নি'মাহ। এই নামের রহস্য জানতে বইটি পড়ুন। হাজী সাহেব চরিত্রটি মা শা আল্লাহ! সত্যিকারের মু'মিন কি এমনই হয় সাহাবিদের মতো যারা বলে "সামি''ঈ না ওয়া আত'ঈ না"। সাধারণ মানুষ তাদের ইসলামের প্রতি একনিষ্ঠ শ্রদ্ধা ভালবাসা, আল্লাহ ভীরুতা, আমানতদারীতা, উত্তম আখলাক দেখে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল। লেখক হাজী সাহেব চরিত্রের মধ্যে এসব গুনের সমন্বয় ঘটিয়েছেন আলহামদুলিল্লাহ। যার জন্যই হয়ত বিধর্মী নীলিমা আমাদের দিদিমা হয়েছিলেন। কিন্তু হিদায়াত তো আল্লাহ দান করেন। হাজী সাহেবের একটা গুন আমাকে মুগ্ধ করেছে। সেটা হল নজরের হেফাজত। যেটা বর্তমান সময়ে আমল করা অতিব জরুরী এবং অত্যন্ত কঠিন। হাজী সাহেব গ্রামের খুবই সাধারন আর দশ জন মানুষের মতো অশিক্ষিত একজন মানুষ হলেও তার ভেতরটা আলাদা। ইবাদতের একনিষ্ঠতা এবং আল্লাহর প্রতি ভালবাসাটা পূর্বপুরুষ থেকে বা পারিবারিকভাবে পাওয়া। এই বিষয়টা আমার মক্কার কাফেরদের কথা মনে করে দিচ্ছে যারা তাদের পুর্বপুরুষের ধর্মকে ছাড়তে চায়নি। যদিও কাফেরের সাথে মুমিনের তুলনা করা যায় না। লেখক বইটিতে কুরআন ও সুন্নাহর বিভিন্ন নির্দেশ, বিষয়াদি গল্পের ছলে তুলে ধরেছেন মা শা আল্লাহ। পরিবার হল বাচ্চার প্রথম মাদ্রাসা। হাজী সাহেব বাইতুল্লাহর জন্য টান, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা, কুরআন এবং তাহাজ্জুদকে জীবনের অংশ নেয়া নেয়া এগুলো পরিবার থেকেই পেয়েছেন। আল্লাহর বিধানের প্রতি যত্নশীল, পরোপকারী এবং আলেমদের সহবতে থাকা। আরও বিস্তারিত জানতে বই পড়তে হবে। নীলিমা, হিন্দু পরিবারে জন্ম। খ্রিস্টান মিশনারী স্কুলে শিক্ষা জীবনের শুরু। সেখানেই তার পরিচয় হয় মুসলিম(রাওফা), বোদ্ধ(মিচেওয়ার), খ্রিস্টান, ইহুদি(জুডিথ) ধর্মের সাথে। জীবনে মুল্যবান কিছু হারিয়ে অমুল্য কিছু পাওয়া। বিভিন্ন চরাই-উতরাই পার করে কিভাবে ইসলামকে পেয়েছে এসব নিয়েই তার চরিত্রকে সাজিয়েছেন লেখক। নীলিমা সম্পর্কে আমার একটা হাদীসের কথা মনে হয়েছে > যে জাহিলি জীবনে উত্তম, ইসলামেও সে উত্তম হয়। এই চরিত্রটি পড়ে তৎকালীন সময়ে সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছি । বিশেষ করে সেই সময়কার ধর্মযুদ্ধ, নিজাম পরিবার, সিকিম, উসমানি খেলাফতের দুই রাজকন্যা, হায়দ্রাবাদ, মাদার তেরেসা ও খ্রিস্টান নান,হিন্দুদের দেবদাসী, তৎকালীন কমিউনিস্ট পার্টি,আরো অনেক কিছু সম্পর্কে। যা ছিল কিছুটা আমার জানার মধ্যে কিছুটা জানার বাইরে। আরো অনেক কিছু জানার আগ্রহ বাড়িয়েছে। হাজী সাহেব পুঁথিগত বিদ্যায় অশিক্ষিত আর নীলিমা পুথিগত, সামাজিক, রাজনৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত।মাদ্রাসার কাজে দীন দুনিয়ার উভয়ের জ্ঞানই দরকার ছিল। দুইজন দুই মেরুর বাসিন্দা। তবুও তাদের সংসার সফল এর পেছনের রহস্য কি??? সংসার জীবনে একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান, ত্যাগ, ভালবাসা, নিজ নিজ কর্তব্যের প্রতি দায়িত্বশীলতা,ছাড় দেওয়ার মনোভাব। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল আল্লাহ ও তার রাসুলের আদেশ নিষেধ মানলে আমার আপনার সংসারও হতে পারে ইশকুল অব লাভ ইন শা আল্লাহ।।। জাযাকাল্লাহু খইর উস্তাদ, এমন চমৎকার কিছু লেখা পড়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। গল্পের মধ্যে রীতিমতো ঢুকে গিয়েছিলাম। যেন সব কিছু আমার চোখের সামনে ঘটছে।।।
তাকী আল জামী @ September 8, 2022


#মাকতাবাতুল_আযহার_রিভিউ_প্রতিযোগীতা_২০২২ বইয়ের নাম :ইশকুল অব লাভ লেখক : মুহাম্মদ আতীক উল্লাহ প্রথম প্রকাশ : মে, ২০১৯ পৃষ্ঠাসংখ্যা :২৫৬ মুদ্রিত মূল্য :৪৮০ টাকা 'ইশকুল অব লাভ '-বইয়ের নামকরণ দেখে প্রশ্ন জাগে বইটা আসলে কি বিষয়ে? ভালোবাসার স্কুল! সেটা কাদের জন্য? পড়া শুরুর পর বুঝতে পেরেছি এই অনন্য সাধারণ বইটি স্মৃতিকথাধর্মী উপন্যাস! শুধু স্মৃতিকথাধর্মী উপন্যাস বললে ভুল হবে। এটা ইতিহাস, গল্প আর উপন্যাস এই তিনটির মিশ্রণ। যেন একের ভিতর তিন। আমরা যেগুলোকে 'ইসলামিক উপন্যাস 'বলে জানি, সেসব বইগুলো যদি "ইশকুল অব লাভ "-বইয়ের মতো লিখা হতো তাহলে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারতাম,ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারতাম,আরও জানতে পারতাম ইতিহাসের পেছনে হারিয়ে যাওয়া জীবনগল্প। বইটির চমৎকার ভূমিকা-ই যথেষ্ট যে কাউকে বইয়ের শেষপাতা পর্যন্ত আটকে রাখতে। দীর্ঘ ভূমিকাটি উপন্যাসের স্বাদ আস্বাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। এক বৃদ্ধ আর কিছু দুষ্ট ছেলেদের কাহিনীর মধ্য দিয়ে শুরু উপন্যাসটি। বৃদ্ধ ভিন্ন ধরনের এতেকাফে পারদর্শী। আর এই দিকে দুষ্ট ছেলেরা বৃদ্ধের কাজে বাগড়া দেওয়ার জন্য পিছু নেয়। তাদের দুষ্ট মনের কাজ ছিলো বৃদ্ধের পিছে লাগা। এমনকি তারা তাকে ভূত সেজে ভয় দেখানোর প্ল্যানও করে।বৃদ্ধ তার প্রেয়সীকে এনে মসজিদের পাশেই একটি ঘরে রাখে। পরবর্তীতে দুষ্ট ছেলেরা ভুল বুঝতে পারে।তারা এমন কিছু জানতে পারে, ফলে 'হাজীসাহেব ও দিদিমার ' প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায় মন ভরে যায়। পুরো উপন্যাসের অর্ধেকটা জুড়ে এই দুজন মানুষের ভালোবাসার কাহিনীর মধ্য দিয়ে উঠে এসেছে ভারত ভাগের সময়কার দাঙ্গা-হাঙ্গামার দুঃখজনক কাহিনী ও বিস্মৃত ইতিহাসের ধনরত্নগুলো।আমার কাছে এই পর্বটি খুব ভালো লেগেছে। বইটির মূল চরিত্র 'হাজী সাহেব'। তাকে কেন্দ্র করে আর্বতিত হয়েছে অন্যান্য চরিত্র, অগ্রসর হয়েছে ঘটনা পরস্পরা। উপন্যাসের সবচেয়ে আলোচিত চরিত্র দিদিমা। এই দিদিমাও 'দিদিমা' হয়েছেন হাজী সাহেবের সরল ছোঁয়ায়।দিদিমার ভাষ্যমতে, হাজী সাহবের গুণাবলি পড়ার সময় প্রতিটি পুরুষ হৃদয়ের মনে হাজী সাহেব হওয়ার সাধ না জাগাটা অস্বাভাবিক। 'নীলিমা' এই চরিত্রটি অসাধারণ। এই চরিত্রের সবটাই আমাকে নতুন শিখিয়েছে আসলে কী শিখতে হবে।পল্লীগ্রামে থেকেও জ্ঞানপিপাসা ও জ্ঞানের কল্যাণে কীভাবে দ্বীনের খেদমতের আলোকে অপরূপ প্রতিচ্ছবি ও আত্নমর্যাদাবোধ সম্পন্ন এক অনন্যা হয়ে ওঠা যায়-নীলিমা তার উদাহরণ। উপন্যাসের প্রথম ভাগের চরিত্রগুলোর পরিচয় ও সখ্যতার যোগসূত্র ধরেই দ্বিতীয় ভাগে পত্রালাপের সূচনা হয়। চিঠিগুলো পড়তে পড়তে পাঠকের মনে হবে এই উপন্যাসের চিরচেনা গলিপথ হাঁটতে হাঁটতে ইতিহাসের মহাসড়কে উঠে পড়েছে। এতে সংক্ষিপ্তভাবে উঠে এসেছে উসমানি খলিফার সাথে হায়দারাবাদের নিজামের সম্পর্ক, সুলতানা খাদীজা ও নিলুফার খানম ফরহাতের এর বিস্তারিত বিবরণ,বিভিন্ন ইংরেজ গর্ভনরদের কার্যকলাপ, ভারতের রাজনীতিবিদদের কুটিলতা, পাকিস্তানের রাজনীতিবিদের মেরুদন্ডহীনতার এক করুণ বর্ণনা, খ্রিস্টান মিশনারীর প্রকোপ আর লেদুপ দর্জির অভাগা সিকিমের ভাগ্যহত হওয়ার বেদনানীল গল্প। ইতিহাসের এই শিক্ষাগুলো আমাদের জন্য খুব বেশি প্রাসঙ্গিক। এটা যেন আমাদের জন্য সর্তকবার্তা! চিঠিগুলোতে এমন পয়েন্ট রয়েছে যা বারবার পড়ে উপলব্ধি করবে । প্রত্যেকের ভাবনার জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করবে। পত্রালাপের কিছু পয়েন্টের কথাগুলো প্রতি মুহূর্তে মনে করার মতো। একটা বিষয় পাঠকের দৃষ্টি আর্কষণ করতে সক্ষম। সাথে রয়েছে সর্তক হওয়া ও অত্যন্ত প্রয়োজন। সেবা ও মানবতার নামে ইহুদি -খ্রিষ্টানদের তৎপরতা যা তখনো ছিল,এখনো আছে। ২৫৬ পৃষ্ঠার এই বইটি তে উঠে এসেছে জীবন ও ইতিহাসের নানাদিক।আলহামদুলিল্লাহ, বইটা বেশ ক'দিন আগে পড়া শেষ করেছি। এটা আমার পড়া প্রথম ইসলামিক উপন্যাস। সহজ শব্দ, প্রাঞ্জল বাক্য এবং সাবলীল বর্ণনার মাধ্যমে পাঠকের হৃদয় ছোঁয়া যায় -তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ "ইশকুল অব লাভ "। পড়া শেষ মনে হল আরো একটু থাকতো ভালো হতো। ভালোলাগার রেশই যেন কাটছে না। এখনো অবধি পর্যন্ত সে-ই স্বাদ জিভে লেগে আছে।বইটাকে আমি মাস্টারপিস মনে করি । আমার পড়া যত বই আছে তারমধ্যে এই বইটাও সেরা হয়ে থাকবে আজীবন ইনশাআল্লাহ। এবার আপনাদের পড়ার পালা৷ রিভিউদাতা-তাকী আল জামী ১৭.০৮.২০২২
সাখাওয়াত রাহাত @ September 8, 2022


❝বাতাস থেকে মন খারাপের কাল্পনিক কারণ খুঁজে অভিমান করা, কৈশোরের চমৎকার এক মধুর স্বভাব! একান্ত ভালোবাসার মানুষ ছাড়া এ মিষ্টি অভিমানের মূল্য অন্য কেউ বোঝে না। তাই ভালোবাসার অপর পিঠের নাম 'অভিমান'।❞ ★প্রাককথন: 'ইশকুল অব লাভ' মানে 'ভালোবাসার পাঠশালা'। এখানকার মূল সিলেবাস বা পাঠ্যসূচি হলো 'প্রকৃত ভালোবাসা'। কোনো কথা না বলে, কারো দিকে না তাকিয়েও কীভাবে অনেক কথা বলা যায়, অনেক বার্তা দেওয়া যায়—এখানে তা পরম যত্নে শেখানো হয়। নারীর প্রকৃত ও শরীয়াহ অনুমোদিত ভালোবাসার পাঠশালা কোনটি—তা হৃদয়ঙ্গম করানো হয়। গল্পচ্ছলে ইতিহাসের বিভিন্ন পাঠ পর্যালোচনা ও শিক্ষনীয় বিষয়গুলো ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ পাঠশালার প্রধান শিক্ষাগুরু দু'জন; হাজী সাহেব এবং দিদিমা। ★প্রধান চরিত্র: ০১ হাজী সাহেব একজন স্বপ্নচারী ও স্পষ্টবাদী মানুষ, যিনি ইনিয়ে-বিনিয়ে কথা বলতে অপছন্দ করেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও পারিবারিক শিক্ষার গুণে সুশিক্ষিত। আপাদমস্তক ধর্মভীরু; যিনি নিয়মিত তাহাজ্জুদ পড়ে মুনাজাতে শিশুর মত হাউমাউ করে কাঁদেন। পাশাপাশি কঠোর পরিশ্রমী, প্রচণ্ড আত্মপ্রত্যয়ী। অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছার ক্ষেত্রে পরম আত্মবিশ্বাসী। সম্মোহনী শক্তির অধিকারী এ চরিত্রটি একজন জাত শিক্ষকের মতোই পাঠককে শেখাবে সত্যিকারের ভালোবাসা। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও কর্তব্যনিষ্ঠা ও স্বকীয়তা বজায় রাখার প্রতি প্রণোদিত করবে। ★প্রধান চরিত্র: ০২ দিদিমা যেন হাজী সাহেবের ঠিক বিপরীত মেরুর বাসিন্দা। চৌদ্দপুরুষের ধারাবাহিকতায় দিদিমারূপি 'নীলিমা' প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় ঋদ্ধ। শিক্ষাসূত্রেই পেয়েছেন নানা ধর্মের, নানা বর্ণের মানুষের সাহচর্য। তাই হয়তো তিনি ভীষণ আড্ডাবাজ আবার নিভৃতচারী। আবেগি কিন্তু নিয়মনিষ্ঠ। বিনয়ী কিন্তু অভিমানী। বিরহী, কিন্তু আত্মমগ্ন। কিছুটা দুঃখী, কিন্তু প্রাণচঞ্চল। সামান্য বিষণ্ণ, কিন্তু সেই সাথে সচেতন। সদা-হাস্য, তবে চিন্তক। হাজী সাহেব নামক পরশপাথরের ছোঁয়ায় দিদিমা লাভ করেন জীবনের সবচেয়ে বড় দৌলত 'ঈমান'। কৈশোরে কনভেন্ট স্কুলে পড়ার সময় নবাবজাদি 'রাওফা'র সুললিত কণ্ঠে শোনা গজলের মায়াবী সুর তার হৃদয়ে অনুরণিত হয়েছিল। সেই গজলে মা খাদিজার মৃত্যুতে নবীজি ﷺ ও সন্তানদের কষ্ট হওয়ার যে করুণচিত্র ফুটে ওঠেছিল, তা হৃদয়ে তৈরি করেছিল হাহাকার। চোখ থেকে অঝোরে ঝরিয়েছিল অশ্রু। নীলিমা থেকে 'নি'মাহ' হওয়ার অপরিস্ফুট সূচনা হয়তো এটাই ছিল। ★পাঠ অনুভূতি: 'আমারে দেব না ভুলিতে'—জাতীয় কবি কাজী নজরুলের ঠিক এ বাক্যটিই মাথায় ঘুরছে 'ইশকুল অব লাভ' বইয়ে হাজী সাহেবকে আদ্যোপান্ত জেনে। আসলে গোটা বইয়ে তাঁর পৌরুষদীপ্ত কর্মকাণ্ডই তাঁকে মনে রাখতে বাধ্য করেছে। তাঁর সততা, সরলতা, দায়িত্বশীলতা, বিশ্বস্ততা, বীরত্ব ও ধার্মিকতায় যারপরনাই মুগ্ধ হয়েছি। কারো সাথে কথা কাটাকাটি বা ঝগড়া না করেও যে জেতা যায়— হাজী সাহেবকে না পড়লে হয়তো বিশ্বাস করতে পারতাম না। আমার কাছে এ বইয়ের প্রিয় চরিত্র 'হাজী সাহেব'। বাসর রাতে নতুন স্ত্রীর জন্য মচমচে মাছ ভাজার সঙ্গে তাঁর ঝোলা থেকে বের হওয়া জমজমের পানি, প্রায় ১০ পদের খেজুর, বোরকা, ওড়না, সুরমা, সুগন্ধি, চুড়ি, হার ইত্যাদির ফিরিস্তি দেখে প্রথমে অবাক এবং পরে হতবাক হয়েছি! বিস্ময়াভিভূত হয়ে ভেবেছি—এমন মানুষও এ পৃথিবীতে আছে! সেইসাথে রোমাঞ্চে ভরপুর ও জ্ঞানের মূর্তপ্রতীক 'দিদিমা'র চরিত্রটিও অসাধারণ লেগেছে। তাঁকে পড়ার সময় নজরুলের আরেকটি পঙক্তি বারবার মনে পড়ছিল— 'বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।' বইয়ের একেবারে শেষে এসে অবশ্য দিদিমা'র জন্য বেশ খারাপ লেগেছে। বারবার মনে প্রশ্ন জেগেছে—এমনটা না হলেই কী হতো না? এধরনের বই একবার পাঠে তৃপ্ত হওয়া যায় না। বারবার পড়তে ইচ্ছে করে। ★বইটির একান্ত পাঠে যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানা যাবে: • 'জাত শিক্ষক'-এর পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য কী? • আগেকার দিনে গ্ৰামীণ জনজীবন কেমন ছিল? • ভারতে ইহুদিদের আনাগোনা কবে থেকে? • ভারতে কয় জাতের ইহুদি বাস করত? • ভারতের প্রথম দুই মহিলা স্নাতক কারা? • দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম মহিলা ডাক্তার কে ছিলেন? • ব্রাহ্মধর্মের প্রবর্তন কোন ধারায় হয়েছিল? • বর্তমানে নিষিদ্ধ 'দেবদাসী'রা কতটা মানবেতর জীবনযাপন করত। • খ্রিস্টান নানদের সাথে হিন্দু দেবদাসীদের সাযুস্য। • বই না পড়েও কীভাবে জ্ঞান অর্জিত হয়? • চোখ সুন্দর ও ভাষাময় হয় কীভাবে? • নারীদের শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও সুশিক্ষার সুফল এবং কুশিক্ষার ভয়াবহতা। • তুরস্কের খিলাফাহ বিলুপ্তির পর সর্বপ্রথম কোন প্রেসিডেন্ট আযান ও আরবি শিক্ষা চালু করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন? এজন্য তাকে কী মূল্য চুকাতে হয়েছিল? • কোন অটোমান সুলতান ইহুদিদের গোপন সংগঠন তুর্কি ফ্রি-ম্যাসন সোসাইটির সদস্য ছিলেন? • কাকে 'কোহিনুর অব হায়দারাবাদ' বলা হতো? • ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শাসনের ভিত মূলত কার হাতে পোক্ত হয়? • কার হাতে টিপু সুলতান শহীদ হয়েছিলেন এবং মহীশূর রাজ্যের পতন ঘটেছিল? • ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে বাণিজ্যিক কোম্পানি থেকে শাসকে পরিণত করেছিল কে? • ভারতে আগত ব্রিটিশ প্রশাসকদের মধ্যে কে ছিলেন একাধারে একজন বিজয়ী, নির্মাতা ও সংস্কারক? • 'ছেলেটাকে আমার হাতে দাও বাবাটা কার হাতে পড়লো তা নিয়ে আমি চিন্তা করি না'—এই বিখ্যাত উক্তিটি কাদের? • কনভেন্ট ও চার্চের তত্ত্বাবধানে বিশ্বব্যাপী পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর আদি উৎস কী? • জগদ্বিখ্যাত কোহিনুর হীরাটি কোন হীরকখনিতে পাওয়া গিয়েছে? • পলাশীতে সিরাজুদ্দৌলার পরাজয়, মহীশূরে টিপু সুলতানের শহীদ হওয়া ও হায়দরাবাদের নিজামশাহীর পতন এক সূত্রে গাথা কীভাবে? • প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি ভারতের মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গি কেমন? • 'সত্যাগ্ৰহ' আন্দোলনের ধুয়া তুলে ভারত কীভাবে ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের সম্মিলিত আয়তনের চেয়ে বৃহত্তর স্বাধীন 'হায়দারাবাদ'কে গিলে ফেলেছিল? • ছলে বলে কৌশলে ভারত কীভাবে স্বাধীন জুনাগড় (গুজরাট), সিকিম ও কাশ্মীর (একাংশ) কে নিজের সাথে একীভূত করে নিয়েছিল? ★বইটি কাদের জন্য? যারা গল্প পড়তে পছন্দ করেন, বইটি তাদের খুব ভালো লাগবে। উপন্যাসপ্রেমীরা তো এটিকে প্রিয় উপন্যাসগুলোর একটি মনে করতে বাধ্য হবে। ইতিহাসের গলি ঘুপচিতে ঢু মারতে যাদের ভালো লাগে, এ বইটি তাদের অবশ্যপাঠ্য। বইটিতে এমন কী আছে, যার কারণে এটি পড়তেই হবে— না বলে, বরং বলা ভালো—কী নেই বইটিতে? ভারতে মোঘল, সুলতানী শাসনামলের খণ্ডচিত্র, তুরস্কের উসমানীয় সাম্রাজ্যের চুম্বকাংশ, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনকাল, ৪৭ এর দেশভাগ, হিন্দু নেতৃবৃন্দের হঠকারিতা, কোনঠাসা ইসলামি ঐতিহ্য ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বইটিতে সুনিপুণভাবে বিবৃত হয়েছে। মোটকথা, গল্প, উপন্যাস ও ইতিহাস—এ তিনটিই বইটির মূল উপজীব্য। ★বই সম্পর্কে: বইটির মূল প্লট ১৯৪৭ সালের ভারত বিভাজন বা দেশভাগ। এ সম্পর্কে জানাশোনা থাকলেও লেখকের বর্ণনায় সেসব বিবরণ আরও জীবন্ত ও নির্মোহ লাগবে। বইটিতে কোনো সূচিপত্র নেই। তবে বেশকিছু পরিচ্ছেদ আছে। শুরুতেই চারপৃষ্ঠাব্যাপী 'মুকাদ্দিমা' পড়লে পাঠ সম্পর্কে সামান্য ধারণা পাওয়ার পাশাপাশি পুরো বইটি পড়ার প্রবল আগ্ৰহ তৈরি হবে। লেখক এখানে ভাষাসাহিত্য ও অলংকারের যে ঢেউ তুলেছেন, তাতে পাঠকমনে নাচন সৃষ্টি হবে সন্দেহ নেই। বইটিকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম ভাগে হাজী সাহেব ও দাদিমার উপাখ্যান এবং দ্বিতীয় ভাগে বান্ধবীদের সাথে দাদিমার চিঠিপত্রের আদান-প্রদান। চিঠিগুলোতে ইতিহাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আখ্যান চর্চিত হয়েছে। চোখ কপালে তুলে দেওয়ার মতো বেশকিছু রোমহর্ষক বর্ণনা ও অজানা তথ্যও পরিবেশিত হয়েছে। একেবারে শেষদিকে প্রায় আড়াই পৃষ্ঠাব্যাপী একটি সংক্ষিপ্ত অথচ সমৃদ্ধ 'পরিশিষ্ট' আছে। এটি পুরো কাহিনীর মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করেছে। ★লেখক সম্পর্কে: বইটি লিখেছেন সময়ের অন্যতম পাঠকপ্রিয় লেখক মুহতারাম 'মুহাম্মদ আতীক উল্লাহ' হাফি.। কুরআনের একজন সফল শিক্ষক হওয়ার পাশাপাশি যিনি বইয়ের পাতায় যাপিত জীবনের গল্প বুনেন। মনের মাধুরী মিশিয়ে কুরআন-হাদিসের আলো বিলি করেন। কুসুমিত গদ্যের কিমিয়াগির হিশেবে ইতিমধ্যেই যিনি সর্বশ্রেণীর পাঠকের হৃদয়ের মণিকোঠায় জায়গা করে নিয়েছেন। যার নতুন বইয়ের খবর জানার জন্য পাঠকেরা হন্যে হয়ে প্রকাশককে ফোনে, মেসেজে, ইনবক্সে বারবার মধুর যন্ত্রণায় বিদ্ধ করেন। যিনি ফেইসবুকে নতুন কোনো লেখা পোস্ট করার সাথে সাথে ফ্যান-ফলোয়াররা হুমড়ি খেয়ে পড়েন। এ পর্যন্ত তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা প্রায় পঁচিশ। 'জীবন জাগার গল্প', 'কুরআনিয়্যাত' 'সুনানিয়্যাত' ও 'ইতিহাসের শিক্ষা' নামক সিরিজের অধীনে তিনি এসব বই লিখেছেন। প্রকাশিতব্য বইয়ের তালিকায় আছে আন্দালুসিয়ান বারবারা, কান্নাসু বাগদাদ : দ্য জুবা স্নাইপার ইত্যাদি। ★প্রচ্ছদকথন: বইটির প্রচ্ছদ করেছেন প্রচ্ছদজগতের মুকুটহীন সম্রাট 'কাজী যুবাইর মাহমুদ'। সন্দেহ নেই, এটি তার করা সেরা প্রচ্ছদগুলোর একটি। প্রচ্ছদের মাধ্যমেই যেন বইয়ের বিষয়বস্তুর একটা প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। শূন্য থেকে আসা ধবধবে সাদা একটি কিরণ বইয়ের এবং লেখকের নাম ভেদ করে বা উভয়কে আলোকিত করে সাদামাটা একটা ঘরের ওপর আছড়ে পড়ছে। এটা কীসের আলো? ভালোবাসার? সফলতার? না কি হিদায়েতের? আর অনাড়ম্বর ঘরটিই বা কার, যার ওপর উদ্ভাসিত এ আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে? এ নিশ্চয়ই হাজী সাহেব-দিদিমা দম্পতির ঘর! ★ব্যাক্তিগত রেটিং ৯/১০ চমৎকার ভাষাশৈলী, সাহিত্য ও অলংকারের ব্যাপক উপস্থিতি, বিষয়বস্তু অনুযায়ী চরিত্রগুলোর যথার্থ প্রয়োগ, ইতিহাসের অজানা অধ্যায়ের মঞ্চায়ন, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উত্তেজনা টানটান রাখা এবং প্রয়োজনবোধ ইত্যাদি বিষয় চিন্তা করে বইটিকে ১০ এর মধ্যে ৯ দেওয়াই যায়।
মুহাম্মদ শোয়েব রুমী @ September 8, 2022


#মাকতাবাতুল_আযহার_রিভিউ_প্রতিযোগীতা_২০২২ বই: ইশকুল অব লাভ ধরন: রোমান্টিক উপন্যাস, স্মৃতিকথা, ট্র্যাজেডী, ইতিহাস লেখক: মুহাম্মাদ আতীক উল্লাহ (বিঃদ্রঃ জেনারেল লাইনে পড়ুয়া বা ইসলামিক বই পড়তে অনাগ্রহী পাঠকদের উপযোগী করে এই রিভিউ লিখেছিলাম। তাই এই রিভিউ পড়ে বইটিকে ইসলামিক মনে হবে না। এজন্য ক্ষমাপ্রার্থী। তবে কোন পাঠক বইটি পড়ে ফেলার পর এর আসল বৈশিষ্ট্য উন্মোচন করতে পারবেন। এছাড়াও পাঠকদের আগ্রহী করতে বইয়ের অনেক তথ্য যোগ করায় মূল রিভিউর চাইতে লেখাটা বড় হয়েছে। তাই একটু ধৈর্য্য নিয়ে পড়ার অনুরোধ। আল্লাহ লেখকের নিয়ত ও কাজকে কবুল করুন।) রিভিউঃ এই লেখককে আমি চিনি না, শুধু বই এর নাম, ভূমিকা আর কয়েক পৃষ্ঠা দেখে রোমান্টিক বই মনে করে কিনেছিলাম। প্রথমে মনে হয়েছিল 'পদ্মা নদীর মাঝি'র মতোই একটা রোমান্টিক উপন্যাস কিন্তু পুরো বই পড়ার পর মনে হলো মানিক বন্দোপাধ্যায় এর 'পদ্মা নদীর মাঝি' এই বই এর ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারবে না। দুই বইতেই একজন মাঝি হলেন মূল চরিত্র। তবে এই বইতে একজন মুসলিম মাঝির সাথে এক হিন্দু মেয়ের প্রেম হয়। কিন্তু এই প্রেমকাহিনী এত সুন্দর, নিষ্পাপ আর মুসলিম হিসেবে হালাল গন্ডির ভেতর থেকে ঘটনাগুলো ঘটেছে যে না পড়লে বুঝা যাবে না। 'পদ্মা নদীর মাঝি' উপন্যাসের চরিত্র, কাহিনী আর মূল উদ্দেশ্য (কম্যুনিজম) এর বেশিরভাগ বিষয়ই ইসলামের দৃষ্টিতে অবৈধ। অথচ 'ইশকুল অব লাভ' নামক এই উপন্যাসটিতে এই অচেনা লেখক কোন ধর্মেরই মূল্যবোধ আর রীতি-নীতি লঙ্ঘন না করে অত্যন্ত সুন্দর আর নিষ্পাপ ভাবে এক মুসলিম মাঝি আর হিন্দু মেয়ের মধ্যে প্রেম এবং তার সফল পরিণতি ফুটিয়ে তুলেছেন। অত্যন্ত উঁচু মাপের লেখক ও ঔপন্যাসিক না হলে এই কাজ সম্ভব নয়। এমনকি অসাম্প্রদায়িকতা ও হিন্দু-মুসলিম বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক কাকে বলে তাও এই লেখক বাস্তবতার নিরিখে দেখিয়ে দিয়েছেন। বিয়ের আগে ও পরে তাদের মধ্যে যেই প্রেম ও ভালোবাসার অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে তা লাইলি-মজনু আর রোমিও-জুলিয়েটের প্রেম কাহিনীকেও হার মানাবে। বিশ্বাস না হলে পুরো বই পড়ে দেখুন। ঘটনাগুলোর সময়কাল বিশ শতকের প্রথম দিকের আর স্থান অবিভক্ত বাংলা ও ভারতবর্ষের। তাই অনেক অজানা কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাসও আছে। এছাড়াও জহির রায়হানের কালজয়ী উপন্যাস 'হাজার বছর ধরে' এর মত গ্রামবাংলার আবহমান কালের জীবন ও সংস্কৃতিও ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসটিতে। তবে শুধু বাংলা আর ভারতবর্ষ না, উপন্যাসটি পড়লে পাঠকের মনোজগতে পুরো পৃথিবীতেই এক রোমাঞ্চকর সফর হবে। বাংলার বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চল, ঢাকা আর রাজশাহী থেকে শুরু করে কলকাতা, রবীন্দ্রনাথের জোড়াসাঁকো, শান্তিনিকেতন, বোম্বাই(বর্তমান মহারাষ্ট্র ও গুজরাট), উত্তর প্রদেশের এলাহাবাদ ও রাজধানী লখনৌ, হিমাচল প্রদেশের রাজধানী সিমলা, পশ্চিমবঙ্গের হিমালয় অধ্যুষিত দার্জিলিং, খৃষ্টানদের কনভেন্ট স্কুলসমূহ এবং বেথুন কলেজসহ অনেক বিখ্যাত স্কুল ও কলেজ, জুনাগড়(বর্তমান গুজরাট), হায়দারাবাদ(বর্তমান তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশ), দিল্লী, পাঞ্জাব, করাচী, মক্কা, মদীনা, উসমানী খিলাফার তুরস্ক ও ইস্তাবুল, মিসর, ফ্রান্স ও নিস শহর, ইসরায়েল ও জেরুজালেম এবং বৃটেন ও লন্ডন পর্যন্ত পাঠককে ভ্রমণ করিয়ে আনবেন এই দক্ষ লেখক। তবে মূল কাহিনী অবিভক্ত বাংলা ও ভারতবর্ষেই ঘটেছে। আরেকটি ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো লেখক পৃথিবীর প্রধান পাঁচ ধর্মের চরিত্রই এনেছেন এই উপন্যাসে। নায়িকারা চারজন বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলেন। তাদের মধ্যে নায়িকা হিন্দু, একজন মুসলিম, একজন ইহুদী আর একজন বৌদ্ধ। আর তাদের টিচার ছিলেন খৃষ্টান। এছাড়াও লেখক অত্যন্ত মু্ন্সিয়ানার সাথে পাঠকের মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো একসাথে অনেকগুলো বিষয়ের অবতারণা করেছেন এই বইতে। উপন্যাসের প্রথম ও মূল অংশে রয়েছে রোমান্টিকতা, অসাম্প্রদায়িকতা, হিন্দু-মুসলিম বন্ধুত্বপূর্ণ সহাবস্থান, অসংখ্য গুণাবলীর অধিকারী একজন অসাধারণ মানুষের চরিত্র, গ্রামীণ পরিবেশে থেকেও একজন সুশিক্ষিত গৃহবধূর শিক্ষানুরাগ- ধৈর্য্য-ভালোবাসা ও ত্যাগ, ইসলামিক মূল্যবোধ ও রীতি-নীতি, ভ্রমণ কাহিনী ও ইহুদীদের বিশেষ গুণাবলী। আর দ্বিতীয় অংশে লেখক চিঠির ভাষায় নিয়ে এসেছেন উসমানী রাজ পরিবারের শেষ সময়ের অজানা অধ্যায়, বৃটিশ গভর্নরদের শোষণের চিত্র, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোল, বাংলার দুর্ভিক্ষ, মন্দিরের দেবদাসী আর গীর্জার নান প্রথা, ইউরোপ ও খৃষ্টধর্মের একমুঠো ইতিহাস, কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের নেতাদের বিরোধ, দেশভাগের সময়কার লুকিয়ে রাখা কিছু লোমহর্ষক ঘটনা ও আগ্রাসনের আখ্যান এবং ভারতীয় ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বাঁক। মোটকথা একের ভিতর সব। এছাড়াও এই ঔপন্যাসিক বিশেষ আঙ্গিকে উপন্যাসের নায়ক-নায়িকার সাথে সংযোজন করেছেন বাস্তবের কিছু ঐতিহাসিক নায়ক-নায়িকা যাদের অধিকাংশের সাথে মূল উপন্যাসের মিল না থাকলেও খুব প্রাসঙ্গিকভাবেই লেখক তাদের এখানে এনেছেন। তবে অনেকেই এই প্রেম কাহিনীর সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। এদের মধ্যে রয়েছেন সিস্টার মাদার তেরেসা, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও তার পরিবার, সর্বশেষ উসমানী খলিফা আব্দুল মজিদ, খিলাফত আন্দোলনের নেতা মাওলানা মুহাম্মদ আলি জাওহার ও মাওলানা শওকত আলী, সর্বশেষ উসমানী প্রিন্স উমর ফারুক আফেন্দী এবং প্রিন্সেস খাদীজা দুররে শাহওয়ার ও নিলুফার খানম ফরহাত, বৃটেনের রাজা ষষ্ঠ জর্জ এবং রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও প্রিন্সেস মার্গারেট, হায়দারাবাদের নিজাম মীর উসমান আলী খান ও তার পরবর্তী নিজামগণ, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট আদনান মেন্দেরেস, সৌদি আরবের বাদশাহ সৌদ বিন আব্দুল আজীজ, ইরানের রাজা রেজা শাহ ও তার ছেলে মুহাম্মাদ রেজা শাহ পাহলোভী, মিসর ও সুদানের রাজা প্রথম ফুয়াদ ও তার ছেলে ফারুক, জয়পুরের মহারানী গায়ত্রী দেবী, হায়দারাবাদের বিশিষ্ট সমাজকর্মী আমিনা হায়দারী, বাংলাদেশের বেগম রোকেয়া, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রধান নেতা ও প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, অন্যতম নেতা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল, অহিংস মতবাদ ও সত্যাগ্রহ আন্দোলনের নেতা মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী, সচিব ও গুরুত্বপূর্ণ নেতা ভি পি মেনন, আঠারো শতক থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিখ্যাত ও কুখ্যাত বৃটিশ গভর্নর জেনারেল বা ভাইসরয় ও তাদের কর্যকলাপ, জুনাগড়(বর্তমান গুজরাট) এর নবাব মহব্বত খানজি ও মন্ত্রী ইসমাইল ইব্রাহামি, জুনাগড়ের প্রধানমন্ত্রী শাহনেওয়াজ ভুট্টো ও তার ছেলে জুলফিকার আলী ভুট্টো, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান, পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা ও গভর্নর জেনারেল কায়েদে আজম মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ, আলিগড়ের প্রতিষ্ঠাতা স্যার সৈয়দ আহমদ খান, শীয়া বিচারপতি সৈয়দ আমির আলী, রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের সংগঠন জেসুইট সোসাইটি ও তার প্রতিষ্ঠাতা লায়োলা এর কর্যক্রম, পনেরো শতক থেকে শুরু করে অসংখ্য সুলতান ও মোগল বাদশাহদের জয়-পরাজয়ের কাহিনী, মহীশুরের টিপু সুলতান ও বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলা, বোম্বাই এর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা কে এম মুন্সী, হায়দারাবাদের 'মুসলিম ঐক্যফ্রন্ট' এর নেতা বাহাদুর ইয়ার জঙ্গ ও কাসেম রিজভী, হায়দারাবাদের প্রধানমন্ত্রী মীর লায়েক আলী ও বিশ্বাস ঘাতক সেনাপতি আল ইদরুস, হায়দারাবাদ দখলের জন্য 'অপারেশন পোলো' পরিচালনাকারী ভারতীয় সেনাপ্রধান ও বাঙালি জয়ন্তনাথ চৌধুরী, ভারতের শিক্ষামন্ত্রী মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, হায়দারাবাদে ভারতীয় সেনাদের যুদ্ধাপরাধের তদন্ত পরিচালনাকারী পণ্ডিত সুন্দরলাল, সিকিমের রাজা থাশি নামগয়াল ও তার ছেলে পরবর্তী রাজা থান্ডুপ নামগয়াল, সিকিমের কংগ্রেস নেতা কাজী লেন্দুপ দর্জি খান শেরপা, নেহেরুর কন্যা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ আরো অসংখ্য ঐতিহাসিক চরিত্র যা লেখক নিয়ে এসেছেন এই উপন্যাসের দ্বিতীয় অংশে। লেখক তার নিজ জীবনের অভিজ্ঞতা, দেশভাগের সময়কার তথ্য ও বইলব্ধ জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে এই বাস্তবধর্মী উপন্যাস রচনা করেছেন। এরপরও বাস্তবের এসব ঐতিহাসিক চরিত্র সংযুক্ত করায় এই উপন্যাসে এসেছে নতুনত্ব, বৈচিত্র্য এবং উপন্যাসকে করেছে আরো বাস্তব। আমি মনে করি এই বই আধুনিক বাংলা সাহিত্যের একটা মাস্টারপিস। প্রেমকাহিনী সফল হলেও নায়কের জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কাহিনী টেনে নিয়ে যাওয়ায় এটিকে একসাথে রোমান্টিক ও ট্র্যাজেডি উপন্যাস বলা যেতে পারে। এছাড়াও চিঠির ভাষায় নায়িকার বান্ধবীদের স্মৃতি থেকে অসংখ্য ঐতিহাসিক চরিত্র ও ঘটনার সন্নিবেশ করায় এই বইকে স্মৃতিকথাধর্মী উপন্যাস বা ইতিহাসের বই বললেও অত্যুক্তি হবে না। তবে উপন্যাসটি সুখপাঠ্য। সবাইকে বইটি পড়ার অনুরোধ রইল। Hats Off to this talented writer Muhammad Atik Ullah. আল্লাহ এই লেখকের কলম থেকে আরো হীরে-মানিক-মুক্তো ঝরানোর তৌফিক দান করুক এবং বাংলা সাহিত্য আরো সমৃদ্ধ করার তৌফিক দান করুক। রিভিউঃ মুহাম্মদ শোয়েব রুমী
আব্দুল মতিন শুভ @ September 8, 2022


#মাকতাবাতুল_আযহার_রিভিউ_প্রতিযোগীতা_২০২২ আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ নাহমাদুহু ওয়ানুসাল্লি আলা রাসুলিহিল কারিম, আম্মা বা’দ 🔰🔰🔰🔰 প্রজন্ম পর প্রজন্ম ধরে পাঠক - পাঠিকা সমাজের একটা বৃহৎ অংশ বুদঁ হয়ে থাকে একটা জায়গায়, এটা নিয়ে ফ্যান্টাসিতে ভুগে, স্বপ্ন সাজায় নিজের মতো করে, নিজেকে বসিয়ে দেয় চরিত্রদের মধ্যে। গড়ে তোলে নিজের জগত। সঙ্গী সাথীদের আড্ডায় আলোচনা হয়, বিতর্ক হয় নানা দিক নিয়ে,,,, একটু কি আঁচ করতে পেরেছেন কি নিয়ে বলতে চাচ্ছি? হ্যাঁ, উপন্যাস, আরেকটু এগিয়ে বললে রোমান্টিক উপন্যাস। একটা প্রজন্মকে কিছু সময়ের জন্য নাকানিচুবানি দেওয়ার জন্য একটা ঝাকরা উপন্যাস যথেষ্ট। আমরা এবার এগুবো এমনই এক জীবনকথার উপন্যাস নিয়ে,, 🔰🔰🔰 গ্রামের একজন সহজ সরল মানুষ, যে কিনা এতো ঝুট ঝামেলায় নাই, প্রতিবেশীর সাতেপাঁচে থাকা তার একান্তই অপছন্দ। স্বাভাবিক জীবনে ছুটে চলার এক অনবদ্য পুরুষ বলা যায় তাঁকে। নিজের কাজ গুলো সর্বাত্মক নিজেই করার চেষ্টা করেন, পাড়াগাঁয়ে ছোট্ট একটা মাদ্রাসা চালান সোখানে কিছু তালিবুল ইলমদের আতিথেয়তা দেন নিজেরই ওয়াকফ করা সম্পত্তি থেকে। অপরের উপকারেই সর্বোচ্চ খুশি থাকার চেষ্টা করেন। জ্বি, ওনিই এ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র " হাজী সাহেব '। তথাকথিত বিদ্যায় বিদ্বান না হলেও, দ্বীনের খেদমতে ওনি এক অগ্রজ সৈনিক। আর দ্বিতীয় প্রধান চরিত্র ওনার সহধর্মিণী " দিদিমা '। জ্ঞানে গুণে একজন চারিত্রিক মধুর মহীয়সী। পৌত্তলিক বাবার ঘরে জন্ম নেওয়া এই নারী শিক্ষা জীবনে পড়াশোনা করেছেন নামি-দামি সব প্রতিষ্ঠানে, জীবনের গতিতে এ কূল ও কূল হয়ে একসময় যোগদান করেন মিশনরি প্রতিষ্ঠানে " নান ' হওয়ার অভিপ্রায়ে। দেশ বিভাগের সময় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় হারান পুরো পরিবারকে। যে পরিবারেই একসময় বিশ্বস্ত সহচর হিসেবে ছিলেন হাজী সাহেব। দিদিমার জীবনের ছোটবড় উত্থান পতনের সাক্ষী হাজী সাহেব, জীবনের শেষদিন পর্যন্ত ছিলেন এই মহীয়সীর মাথার ওপর বটগাছ হয়ে। সবকিছু হারিয়ে সর্বশান্ত হওয়া দিদিমাও আশ্রয় নিয়েছেন এই বটগাছের ছায়ায়। 🔰🔰 বইয়ের শুরুতে যদিও বলা আছে একে উপন্যাস না বলে, স্মৃতিকথা ধর্মী বড়গল্প হিসেবে সম্বোধন করার জন্য। তবুও একে আমি বাস্তবজীবন ধর্মী উপন্যাস হিসেবে সম্বোধন করতেই সাচ্ছন্দ্যবোধ করবো। মোটামুটি সব উপন্যাসেই দেখা যায়, লেখক ছোটবেলা থেকে প্লট শুরু করে শেষ করেন বর্ষীয়ষী কালের সমাপ্তির মাধ্যমে। কিন্তু, এখানে ছিলো ব্যতিক্রম, শুরুই করেছেন ওনি শেষ দিয়ে। এই বইয়ে আরেকটা জিনিস সবচেয়ে দৃষ্টিগোচর ছিলো, একেকটা কাহিনির স্রোতে ইতিহাসের কিছু বাকঁকে সুচারুভাবে গল্পগাথুঁনির মতো গেঁথে দেওয়া। চরিত্রের বৈচিত্র্যতা ঠিক রেখে, প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলা সামনে এনে গল্পের এগিয়ে চলাও ছিলো সূক্ষ্ম চালে বাস্তবতার বহিঃপ্রকাশ। পড়ার সময় মনে হয়েছিলো, আমি ঠিক ঐ জায়গাটায় উপস্থিত, চোখের সামনে ঘটছে সকল ঘটনা। মাঝে মাঝে নিজেকে কেন্দ্রীয় চরিত্রে বসিয়ে, ভাবার চেষ্টাও চলেছিলো সমানতালে, এ বিষয়ে আমি থাকলে কি পদক্ষেপ নিতাম। সবচেয়ে ভালোলাগার বিষয় ছিলো, দুই মেরুর দুটি মানুষের মধ্যকার বোঝাপড়া, চিন্তা ও মননশীলতায় দুই ধাঁচে গড়া দুজন মানুষ কিভাবে একাকার হয়ে গেলেন ভালোবাসার প্রেমময় সাম্রাজ্যে, এটা ছিলো আকর্ষণীয় এবং শিক্ষণীয়ও বটে। জীবনের উত্থান পতনেও কিভাবে দুজন মানুষ পরামর্শ করে ছোট্ট এই মানবজীবনকে কিভাবে সার্থক করা যায় দুনিয়াবি ও আখিরাতে এর সুন্দর উদাহরণ ছিলো এই যুগল। নিঃস্বার্থভাবে, নিজেদের বিলিয়ে দিয়ে কিভাবে একটা সমাজকে রাতারাতি দাঁড় করানো যায়, ভরিয়ে দেওয়া যায় মমতার পুষ্পতটে, জীবনপথের পাথেয় হিসেবে কুড়িয়ে নেওয়ার মতো মুক্তো বলা চলে এই যুগল। বাকিটুকু জানতে হলে ডুব দিতে হবে এই যুগলের রাজ্যে, টাইম ট্রাভেল মেশিনে ঘুরে আসতে হবে তাদের প্রণয়স্বর্গ,,,,,,,, 🔰 মুহাম্মদ আতীক উল্লাহ হাফিজাহুল্লাহ বরাবরের মতোই মাস্টারপিস উপহার দেওয়া লেখক। পাঠক মাত্রই যারা ওনার বই পড়েছেন, তারা বুঝতে পারবেন ওনার লেখা। জীবনধর্মী ওনার প্রত্যেকটা বই সাজেশনবুকের মতো। কল্পিত হিমু না হয়ে, মন চাই ওনার বইয়ের চরিত্রগুলোর মতো আল্লাহ আজ্জাওয়াযালের প্রেরিত দ্বীনের আলোয় নিজেকে আলোকিত করে হয়ে যাই একেকজন দাঈ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা লেখককে হায়াতে তৈয়বা দান করুন, ওনার কলমকে শাণিত করুন, পাঠকের ওপর ওনার ছায়া দীর্ঘায়িত করুন। এবং এই অধমকে মাফ করুন, দ্বীনের পথে কবুল করুন। আমিন,,,, دَعۡوٰىهُمۡ فِیۡهَا سُبۡحٰنَکَ اللّٰهُمَّ وَ تَحِیَّتُهُمۡ فِیۡهَا سَلٰمٌ ۚ وَ اٰخِرُ دَعۡوٰىهُمۡ اَنِ الۡحَمۡدُ لِلّٰهِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ - ইশকুল অব লাভ -মুহাম্মদ আতীক উল্লাহ হাফিজাহুল্লাহ
মোঃ ফারুক আল-ফয়সাল @ September 9, 2022


#মাকতাবাতুল_আযহার_রিভিউ_প্রতিযোগিতা_২০২২ রিভিউ লেখকঃ মোঃ ফারুক আল-ফয়সাল 🍀 বইঃ ইশকুল অব লাভ লেখকঃ মুহাম্মাদ আতীক উল্লাহ হাফিজাহুল্লাহ প্রচ্ছদঃ কাজী যুবাইর মাহমুদ পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ২৫৬ মুদ্রিত মূল্যঃ ৪৮০ টাকা (সাধারণত ৫০% ছাড় দেয়া হয়) প্রকাশনীঃ মাকতাবাতুল আযহার মুহাম্মাদ আতীক উল্লাহ (হাফিজাহুল্লাহ) হুজুরের বই কিনবো কিনবো করে কেনা হয়ে উঠছিল না। নিয়ত করলাম এবার সাইক্লোন অফার থেকে কিছু বই সংগ্রহ করে নিবো। কিন্তু তাঁর এতগুলো বইয়ের ভিতর মাস্টারপিস কোনটা? তাতো জানিনা! কাজেই ইসলামি বইয়ের একটা গ্রুপে পোস্ট দিলাম তাঁর সেরা বইগুলোর নাম জানার জন্য। আর অত্যন্ত আশ্চর্যের সাথে লক্ষ্য করলাম, যারা কমেন্ট করেছেন তাদের প্রায় প্রত্যেকেই "আতীকুল্লাহ হুজুরের সব বইই মাস্টারপিস" এরকম মন্তব্য করেছেন! এমন মন্তব্যে খুবই অবাক হলাম। একজন লেখকের সব বই কিভাবে মাস্টারপিস হয়! অবশ্য আমি এখন নিজেই একথা বলি! যাইহোক, যেহেতু ঐ মুহূর্তে আমার পক্ষে তাঁর এতগুলো বই একবারে সংগ্রহ করা সম্ভবপর ছিলো না, তাই আমি প্রত্যেককে অনুরোধ করেছিলাম, সর্বোচ্চ ৪/৫ টা বইয়ের নাম উল্লেখ করতে। আলহামদুলিল্লাহ, আমি সেবার আতীকুল্লাহ হুজুরের ৮ টি বই সংগ্রহ করেছিলাম। এই বইগুলোর মধ্যে 'ইশকুল অব লাভ' বইটিও ছিল। বইয়ের কাহিনী বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ নেই। কেননা, 'ইশকুল অব লাভ' একটি উপন্যাস। এর কাহিনী যদি বলে দেই তাহলে যারা পড়েন নাই, তারা বইটির রস আস্বাদনে ব্যর্থ হবেন। কাজেই, আমি শুধু পাঠ্যানুভুতি বা বইটি পড়লে আপনাদের কেমন লাগতে পারে, শুধু সেটা শেয়ার করবো। যাতে করে কারো আনন্দের সিকিভাগও নষ্ট না হয়। বইটির কাহিনী আবর্তিত হয়েছে হাজী সাহেব ও দিদিমাকে কেন্দ্র করে। পাঠক কাহিনীর ভিতর যতই প্রবেশ করতে থাকবেন, তিনি যেন নিজের চোখের সামনেই তা ঘটতে দেখবেন। কখন যেন নিজেই একটা চরিত্র হয়ে উঠবেন! হাজী সাহেব ও দিদিমার মতো অবিশ্বাস্য সংগ্রামী জীবনের অংশ হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করবেন। পড়তে পড়তে একটা সময় চোখ বেয়ে দু'ফোটা অশ্রুও গড়িয়ে পড়বে। আর পড়া শেষে মনটা ভীষণ ভারাক্রান্ত হয়ে উঠবে। শীঘ্রই আর কোনো বইয়ে মন বসাতে পারবেন না! অন্য কোনো বই পড়া শুরু করলেও, মনের অজান্তে হাজী সাহেব ও দিদিমার বিভিন্ন ঘটনা চোখের সামনে ভেসে উঠবে! বইটির প্রচ্ছদের কথা একটু আলাদাভাবে না বললেই নয়। প্রচ্ছদে দেখা যাচ্ছে, আকাশ থেকে আলো এসে একটি ঘরকে আলোকিত করে রেখেছে। যা বইটির কাহিনীর সাথে শতভাগ সামঞ্জস্যপূর্ণ। কেন একটিমাত্র ঘর আলোকিত এবং এ ঘরটি কাদের, তা জানার জন্য পাঠককে অবশ্যই বইটি পড়তে হবে। লেখাটি শেষ করতে চাই এই বলে যে, আপনি হয়তো অনেক উপন্যাস পড়েছেন কিন্তু, 'ইশকুল অব লাভ' পড়েননি। তাহলে হ্যাঁ, আপনাকেই বলছি, আপনি আসলে কোনো উপন্যাস-ই পড়েননি। যারা বইটি পড়েছেন, তারা নিশ্চয় আমার কথার সাথে একমত হবেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা আতীকুল্লাহ হুজুরকে দীর্ঘ নেক হায়াত দান করুন, তাঁর ইলমে ও কলমে বরকত দিন।
মোহাম্মদ নুরে আলম @ September 10, 2022


#মাকতাবাতুল_আযহার_রিভিউ_প্রতিযোগীতা_২০২২ রিভিউ লেখকঃ মোহাম্মদ নুরে আলম বইঃ ইশকুল অব লাভ লেখকঃ মুহাম্মদ আতীক উল্লাহ প্রকাশনীঃ মাকতাবাতুল আযহার পৃষ্ঠাঃ ২৫৬ ইশকুল অব লাভ বইটি লেখক মুহাম্মদ আতীক উল্লাহ - এর লেখা অসাধারণ বই। বইয়ের নাম শুনলে বইটিকে মনে হতে পারে এটি ভালোবাসা নিয়ে লেখা একটি বই। কিন্তু বইটি গল্প ও ইতিহাসের সমন্বয়ে লেখা। লেখক বইয়ের প্রথম অংশে গল্প এবং শেষের অংশে চিঠিপত্রের মাধ্যমে কিছুটা ইতিহাস তুলে ধরেছেন। গল্পটি মূলত দুটি চরিত্রের জীবনী তুলে ধরা হয়েছে। একজন হচ্ছেন হাজী সাহেব এবং অন্যজন হচ্ছেন তার স্ত্রী। হাজী চরিত্রটি গল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। সর্বদা আল্লাহর জিকিরে রত থাকা অসাধারণ এতেকাফকারী এবং দানশীল একটি নাম না জানা চরিত্র এই হাজী সাহেব বৃদ্ধ হাজী সাহেব বৃদ্ধ অবস্থায়ও স্ত্রীর ভালোবাসায় অটল। তিনি বৃদ্ধ অবস্থায়ও প্রচুর পরিশ্রম করতে পারে যা অন্যকারো পক্ষে সম্ভব না। তিনি বৃদ্ধ বয়সেও দিনের জন্য একটি দিনি সমাজ গঠনের জন্য পরিশ্রম করেছেন। তিনি প্রথম জীবনে বহু পরিশ্রম করেছেন হজ্জের অর্থ জোগার করার জন্য। তিনি অর্থ জোগার করার জন্য নিষ্ঠার সাথে একজন অমুসলিমের কাছে কাজ করেছেন। এই অংশে তিনি তার নিষ্ঠার পরিচয় দিয়েছেন। বিবাহের পরে তিনি তার স্ত্রীর জন্য বই কিনে দিতে দূরদূরান্ত সফর করেছেন। যা তার স্ত্রীর প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসার প্রকাশ ঘটায়। হাজী সাহেবের স্ত্রী নীলিমার চরিত্রটিও অসাধারণ। তিনিও বিবাহের পর থেকে দিনের পথে প্রচুর শ্রম দিয়েছেন। শুরুর জীবনে তিনি দেখিয়েছেন কথা না বলে কিভাবে মানুষকে ভালোবাসা যায়। তিনি প্রথমে হিন্দু ধর্ম থেকে খ্রিষ্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত হন। খ্রিষ্টান ধর্মে কল্পিত বিবাহ বন্ধনে অাবদ্ধ হয়ে নান হয়ে সারাজীবন চার্চে কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু ভালোবাসার টানে নিজের ভুল বুঝতে পেয়ে ফিরে আসেন। পরবর্তীতে হাজী সাহেবকে বিয়ের সময় ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হন। তিনি এটিও দেখিয়েছেন যেকোনো জায়গায় থেকেই জ্ঞান চর্চা করা সম্ভব। অজপাড়া গাঁয়ে থেকেও স্বামী এবং দিনের খেদমত করেছেন যা তাকে আত্নমর্যাদাসম্পন্য হিসেবে গোরে তুলেছে। বইয়ের দ্বিতীয় অংশে লেখক তুলে ধরেছেন দুই উসমানী রাজকন্যার(খাদীজা খাইরিয়্যাহ দুররে শাহওয়ার সুলতান ও নিলুফার খানুম সুলতানা ফরহাত) অধঃপতনের ইতিহাস। যা খুবই দুঃখজনক। এছাড়াও তিনি ভারত ভাগের সময় কৌশলে জুনাগড়, হায়দরাবাদ এবং সিকিম রাজ্যের স্বাধীনতা হরনের দুঃখজনক ইতিহাস তুলে ধরেছেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তিনি স্বাধীনতা হরনের ইতিহাস তুলে ধরে বাংলাদেশর মুসলমানদের ভারতের কাছ থেকে সতর্ক থাকার জন্য বলেছেন যেন বাংলাদেশের অবস্থা জুনাগড়, হায়দরাবাদ এবং সিকিম রাজ্যগুলো মতো না হয়। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো লেখক দেখিয়েছেন খ্রিষ্টানরা মানবতার নামে মনুষকে কিভাবে খ্রিষ্টানরা তাদের ধর্মে নিয়ে যায়। তাদের থেকেও মুসলিমদের সতর্ক থাকতে হবে। লেখক বইয়ের সর্বশেষ অংশে লেখক কিছুটা কষ্টকর কাহিনীর মাধ্যমে শেষ হয়েছে। লেখক আড়াই পৃষ্ঠার মধ্যে হাজী সাহেবের মৃত্যু এবং তার স্ত্রীর একাকীত্বের কথা তুলে ধরে গল্পটি শেষ করছেন। বইটিতে সুন্দর দুটি জীবন ও ইতিহাসের কথা সুন্দর করে তুলে ধরলেও বানানে কিছুটা ভুল এবং শেষের দিকে ইতিহাসের সালগুলোর সাথে গল্পের কিছুটা অসামঞ্জস্যতা রয়েছে। তাছাড়া অন্য কোনো অসংগতি পাইনি। বইটিতে লেখক গল্পের মাধ্যমে ইতিহাস তুলে ধরায় ইতিহাস বুঝা সহজ হয়েছে। সর্বপরি ছোট্ট এই ২৫৬ পৃষ্ঠার বইয়ে লেখক তুলে ধরেছেন দুটি জীবনের গল্প এবং ইতিহাস।

আপনার মতামত ও রেটিং